নার্স তানিয়ার শরীরের ১০ স্থানে আঘাতের চিহ্ন
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলন্ত বাসে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বর্ণলতা বাসের চালক নূরুজ্জামান আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে চালক, হেলপারসহ তিনজন ধর্ষণে অংশ নেয় বলে স্বীকার করেছে বাসের চালক।
জবানবন্দিতে নূরুজ্জামান জানিয়েছে সে ছাড়াও তার খালাতো ভাই বোরহান ও বাসের হেলপার লালন মিয়া নাস তানিয়াকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। পরে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
শনিবার রাতে বাসের চালক নূরুজ্জামানের এ জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন।
এদিকে, রোববার বাজিতপুরের গজারিয়া বিলপাড় এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন পুলিশের ঢাকা বিভাগের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ ঘটনার সবকিছু জানতে পেরেছে পুলিশ। অচিরেই অন্য আসামিরা জবানবন্দি দেবে। তদন্তের স্বার্থে এখন সবকিছু বলা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।
অপরদিকে, কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জনের কাছে তানিয়ার মরদেহের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোববার বিকেলে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সজিব ঘোষের নেতৃত্বে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমানের কাছে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। ধর্ষণের পর মাথায় আঘাতে তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, নার্স তানিয়ার শরীরের ১০ স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষণের পর মাথায় আঘাতে তানিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, জেলা আইন-শৃঙ্খলা সভায় নার্স তানিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে শেষ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলে, আইন-শৃঙ্খলা সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। সকালে কিশোরগঞ্জ কালেক্টরেট কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
৬ মে রাতে ঢাকা থেকে স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুড়ি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে ও ঢাকার কল্যাণপুর এলাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের সিনিয়র নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া। বাসটি কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ডে আসার পর বাসের অন্য যাত্রীরা নেমে যায়। কটিয়াদী থেকে পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার পথে গজারিয়া বিলপাড় এলাকায় বাসের চালক ও সহকারীরা তানিয়ার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। পরে তানিয়ার মরদেহ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লক্সে রেখে পালিয়ে যায় তারা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ওই দিন রাতেই চারজনের নামে বাজিতপুর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় বাসের চালক, হেলপারসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। ৭ মে তাদের আদালতে হাজির করে আটদিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
নূর মোহাম্মদ/এএম/জেআইএম