দিনে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন যেখানে
একদিকে তীব্র দাবদাহ, অন্যদিকে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাট। উভয় মিলে গত এক সপ্তাহ ধরে দুর্বিষহ দিনাতিপাত করতে হচ্ছে ভৈরববাসীকে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৬ ঘণ্টা দেখা মিলছে না বিদ্যুতের।
অথচ গতকাল শনিবার দেশে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৪১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড অর্জিত হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, সারাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড দাবদাহ থেকে দেশবাসীকে স্বস্তি দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেবল এ চেষ্টা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভৈরববাসীরা!
আরও পড়ুন >> বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভৈরবে বিদ্যুতের অঘোষিত লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে গড়ে প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে প্রচণ্ড গরমে ভোগান্তিতে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা।
বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মূল কারণ হলো- আশুগঞ্জের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে স্থাপন করা ভৈরবের সঞ্চালন লাইনের ৩৩ কেভি ক্ষমতার ৫০/৭৫ এমডিএর ট্রান্সফরমারটি গত ৪ মে থেকে বিকল হয়ে পড়া। ফলে আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্ন হচ্ছে। এ কারণে গত এক সপ্তাহ ধরে ভৈরব এলাকার মানুষ রাতের বেলায় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকছেন। একই অবস্থা দিনের বেলায়ও। শুধু রাতে পরিবর্তে দিন সঙ্গে প্রচণ্ড দাবদাহ।
এলাকার হাজার হাজার মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দাবিতে এবং বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন চেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় তুলছেন। পবিত্র রমজান মাসে বিদ্যুতের এমন ভোগান্তিতে মানুষ নামাজ, রোজা, সেহরি-ইফতারের সময় ঘেমে নিজেকে ভাসিয়ে ফেলছেন, খাওয়ায় হারিয়ে ফেলছেন রুচি। বৈদ্যুতিক পাখা না ঘোরায় শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে অস্থির ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে, শিল্প-কলকারখানায় পণ্য উৎপাদনে ধস নেমে এসেছে।
ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব শহর ও গ্রামে আবাসিক/বাণিজ্যিক মিলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। প্রতিদিন পিক আওয়ারে ৩৫ মেগাওয়াট এবং নন-পিক আওয়ারে ২৮ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। বিগত দিনে প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সরবরাহ ছিল। কিন্তু গত ৪ মে আশুগঞ্জের সঞ্চালন লাইনের ৩৩ কেভি ক্ষমতার ট্রান্সফরমারটি হঠাৎ বিকল হয়ে পড়ে। ফলে আশুগঞ্জ থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে ট্রান্সফরমারটির ত্রুটি দূর করে কিছু কিছু সময়ে ৮/১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভৈরবে সরবরাহ করা হয়। ফলে ২৪ ঘণ্টার বিপরীতে আট ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাচ্ছে না ভৈরববাসী।
আরও পড়ুন >> ২০২৪ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৩০ হাজার মেগাওয়াট
গত শুক্রবার ট্রান্সফরমারটির ত্রুটি আরও বড় আকার ধারণ করে। এরপর সেটি পুনরায় চালু করা থেকে বিরত থাকেন প্রকৌশলীরা। গত শনিবার বিকল্প ব্যবস্থায় স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
এদিকে, চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে হাঁপিয়ে উঠেছেন জেনারেটর ব্যবসায়ীরাও। তারা জানান, টানা চার/পাঁচ ঘণ্টার ব্যাকআপ দেয়া সম্ভব কিন্তু সেটা আরও বাড়লে তো জেনারেটরে কুলায় না।
ভৈরব পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম বাকি বিল্লাহ জানান, ভৈরবের বিদ্যুৎ সমস্যা দূর করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপনকে অবহিত করা হয়েছে। রোববার ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের প্রকৌশলীরা সমস্যাটি অবহিত করতে ঢাকায় পাপনের অফিসে যাওয়ার কথা।
এ বিষয়ে ভৈরব বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সমস্যা সমাধানের জন্য আশুগঞ্জ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াকুব আলীর সঙ্গে কয়েকদিন ধরে বারবার বৈঠক করছি। কিন্তু তিনি বলছেন, ট্রান্সফরমারটি এখন আর সচল করা সম্ভব নয়। মেরামত করলেও খুব বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে না। এটি খুবই ভারী ও ব্যয়বহুল। ট্রান্সফরমারটির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
প্রতিকার পেতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে তা নিশ্চিত করেও বলতে পারেননি তিনি।
আসাদুজ্জামান ফারুক/ভৈরব/এমএআর/পিআর