ময়মনসিংহে বাড়ছে অপহরণ, জড়িত শিক্ষার্থীরাই
ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীদের অপহরণ ও নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলছে। আর এ ভয়ানক অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে খোদ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই। সম্প্রতি দুটি ঘটনায় দুই অপহৃতকে উদ্ধারসহ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিবিএসটি, আনন্দ মোহন ও ঘাটাইল কলেজের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সিবিএসটির শিক্ষার্থী নূরী আল মামুন, সরকারি আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থী ইমরুল ও ঘাটাইল কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজ। এ ঘটনায় সিবিএসটির শিক্ষার্থী নূরী আল মামুন শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তবে এসব অপরাধের আসল গডফাদাররা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নির্যাতিত শিক্ষার্থী ও তাদের স্বজনরা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি মেসে এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে এনে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে অমানুসিক নির্যাতন করা হচ্ছে। একজন হাত ধরে আছে অন্যজন চুলের মুঠি ধরে হাত ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন চালাচ্ছে। নির্যাতনের এমন ভিডিও ধারণ করে পরিবারের সদস্যদের কাছে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে দেখানো হয়। আর তাদের কাছ থেকে আদায় করা হয় মুক্তিপণের টাকা।
সম্প্রতি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণের পর বিষয়টি পুলিশকে জানালে অপহরণ ও নির্যাতনকারী চক্রের প্রধান নূরী আল মামুনকে ময়মনসিংহের সানকিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিঞ্জাসাবাদে এসব তথ্য জানা যায়। নূরী আল মামুন শুক্রবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
অপরদিকে গত বুধবার রাতে নগরীর একাডেমি রোডে আনন্দ মোহন কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের ঘটনায় একই কলেজের শিক্ষার্থী ইমরুল ও ঘাটাইল কলেজের শিক্ষার্থী মাহফুজকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর চক্রটি জানায়, প্রথমে নীরিহ ও টাকা পয়সা ওয়ালা দূরের কোনো শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। পরে তার অভিভাবকের কাছে ফোন করে জানানো হয় আপনার সন্তানকে তার প্রেমিকার সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করা হয়েছে। বিষয়টি আপোস মীমাংসার জন্য বিশ হাজার টাকা লাগবে। টাকা পেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। আর না পেলে রুমের একটি কক্ষে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। দিনের পর দিন চলে এমন অত্যাচার। এমনকি খাবারও দেয়া হয় না।
ভুক্তভোগী এক অভিভাবক জানান, ভাইকে অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচাতে তিন ধাপে ৩০ হাজার টাকা পাঠাই। কোনো কারণ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। আমরা চাইলেও অনেক সময় কিছু বলতে পারি না। কেউ পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে ঝামেলায় পড়তে চায় না।
নগরীর কলেজ রোড, একাডেমি রোড, সানকিপাড়া, কাচিঝুলি, হামিদ উদ্দিন রোড, মাসকান্দা পলিটেকনিক্যাল এলাকাসহ মেসের আধিক্য আছে এমন সব এলাকায় ছাত্ররা হরহামেশাই নির্যাতনের শিকার হয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, এসব ঘটনার পেছনে বড় ধরনের প্রশয়কারী যদি না থাকে তাহলে শুধু সাধারণ শিক্ষার্থী এত বড় অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সাহস পাবে না। আগে খুঁজে বের করতে হবে এদের পেছনে কারা সাহস জোগাচ্ছে।
জেলা পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আর এগুলো নিয়ে কেউ অভিযোগ করতে চায় না। সম্প্রতি অভিযোগ পেয়ে আমরা একাধিক চক্রের সদস্যকে আটক করেছি। তাদের নামে থানায় মামলাও হয়েছে। তারা অপরাধ স্বীকারও করেছে। জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
রকিবুল হাসান রুবেল/এফএ/এমএস