চার ধর্ষকের জরিমানায় এক ধর্ষকের সঙ্গে অন্তঃসত্ত্বার বিয়ের আয়োজন
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে এবার চার বখাটে মিলে এক দরিদ্র তরুণীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করেছে। মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার চার মাস পর এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শালিস বৈঠকে মীমাংসা করতে গিয়ে খোদ ইউপি সদস্য এখন জেলে। এ ঘটনা ঘটেছে উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নে। এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই তরুণী বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে হাজীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- তরুণীর বাড়ির বাসিন্দা রাব্বি (১৯), মেরাজ হোসেন (২২), ইমরান হোসেন (২১), আরেফিন ওরুপে আমিনুল (২০), ইউপি সদস্য (মেম্বার) অহিদুল ইসলাম (৬০) ও সালিশদার মোস্তফা কামাল (৬৫)।
পুলিশ শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে ইমরান, আরফিন ও ইউপি সদস্য অহিদুল ইসলামকে চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে গ্রেফতার করেছে। তারা লঞ্চযোগে ঢাকায় পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
শনিবার সকালে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। আর তরুণীকে মেডিকেল পরীক্ষা করার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের এক গৃহবধূ ছোটবেলায় ওই তরুণীকে দত্তক নেন। তরুণীর মা ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালান। আট মাস আগে একই বাড়ির চার তরুণ তরুণীকে ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি ধাপাচাপা দিতে গ্রাম্য শালিসদাররা গ্রামে শালিস বসিয়ে চার তরুণের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা আদায় করে। তারা চার তরুণের মধ্যে একজনের সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করেন। শনিবার এ বিয়ে হওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এর আগেই পুলিশ টের পেয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
মেয়েটির পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মাস তিনেক আগে তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে তার মা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তরুণী অন্তঃসত্ত্বা বলে জানান। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বাচ্চুকে কথাটি জানানো হয়। পরে চেয়ারম্যান স্থানীয় মাতাব্বরদের বিষয়টি দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেন।
শালিস বৈঠকে তরুণী ধর্ষণ হওয়ার কথা স্বীকার করে। এ প্রেক্ষাপটে শালিসদাররা চার তরুণের কাছ থেকে দেড় লাখ করে ছয় লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। পরে ওই টাকা ইউপি সদস্য অহিদুল ইসলামের কাছে জমা রাখা হয়। তরুণীর বিয়ের সময় ওই টাকা তার পরিবারকে দেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু এর আগেই পুলিশ হানা দিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। তিন আসাসিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, তরুণীর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি জেনে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের জন্য বলেছি। তার ভবিষৎতের কথা চিন্তা করে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ছয় আসামির মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চলছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করা জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইকরাম চৌধুরী/জেডএ