আর ধান চাষ না করার চিন্তা হাওরের কৃষকদের!
বোরো ধান ঘরে উঠলেও মন খুলে হাসতে পারছেন না সুনামগঞ্জের হাওরের কৃষকরা। সরাসরি সরকারি গুদামে ধান দিতে না পারায় লাভের মুখ দেখছেন না তারা। সরকারি হিসেবে প্রতি মণ ধান ১০৪০ টাকা হলেও কৃষকদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এতে করে আবাদের আসল টাকাই ঠিকমতো উঠছে না কৃষকদের।
জমি বর্গা নিয়ে ঋণের টাকায় বোরো ধান আবাদ করে সরকার নির্ধারিত দামে ধান বিক্রি করতে না পেরে পানির দামেই বিক্রি করছেন এখানকার কৃষকরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের তথ্য মতে, এ বছর সুনামগঞ্জে প্রতি কেজি ধান ২৬ টাকা ধরে সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলা থেকে ৬ হাজার ৫০৮ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হবে। তাছাড়া এবার ৩১ হাজার ৯৭৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করবে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়। যার মধ্যে আতপ ও সিদ্ধ দুটোই থাকবে। প্রতি কেজি আতপ ৩৫ টাকা ও সিদ্ধ ৩৪ টাকা কেজি ধরে ক্রয় করা হবে।
সরকারি হিসেবে কোনো গড়মিল না হলেও প্রকৃত কৃষকরা তা পাচ্ছেন না। বিভিন্ন সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের দখলেই চলছে ধান সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয়।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ধান কাটা শেষে এখন চলছে শুকানোর কাজ। কিন্তু ধানের দাম না পাওয়ায় অনেকে বলছেন ভবিষ্যতে আর ধান চাষা না করে অন্যকিছু করবেন।
সদর উপজেলার দেখার হাওরের হালুয়ারগাঁও এলাকা বাসিন্দা জাহির মিয়া বলেন, আমরা অনেক কষ্টে মহাজনের কাছ থকি জমি বর্গা লইয়া ধান চাষ করছি। ওই সময় ধানের সার দেয়া পরিচর্চা করা থকি শুরু করি ধান কাটার সময়ও শ্রমিকরে টাকা দেয়া লাগছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে ধান বিক্রি করতে হইলে ৫০০ টাকা মণ। এতে করে আমরার আসল টাকাই উঠে না।
কৃষাণী গুলবাহার বেগম বলেন, ৪ কেয়ার জমিতে ধান করছিলাম ছেলে-মেয়ে লইয়া শান্তিতে চলমু করিয়া। কিন্তু ধানের দাম ৫০০-৬০০ টাকা মণ। যা ধান হইছে তার অর্ধেক দেওয়া লাগবো যার জায়গা তারে। এখন ধান আবাদো খরচ হইছে ও শ্রমিকরে রোজ ৫০০ টাকা দিয়া কাজ করাইয়া ধানের দাম নাই। এখন আমরা লোকসান দিয়া ধান বেচা লাগের।
কেন ধান সরকারি গুদামে দিচ্ছেন না এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষক শরিফ আহমেদ বলেন, সরকারি গুদামে ধান নিয়া গেলে ২-৩ দিন রাখিয়া কয় ধান ভালা না। তাছাড়া আমরা সরাসরি ধান নিয়াও যাইতে পারি না। যারার অফিসের লগে সম্পর্ক ভালা তারাই একমাত্র ধান গুদামে দিতো পারে। শুনছি সরকারে ধানের দাম ১০৪০ টাকা মণ করছে। কিন্তু আমরাতো এ দামে বিক্রি করতে পারি না। তাই পানির দরেই দান বিক্রি করতে হইরো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বশির আহম্মদ সরকার বলেন, মাত্র আমাদের ধান কাটা শেষ হলো। আমাদের এখানে প্রায় ৩ লাখের মতো কৃষক রয়েছে। যার মধ্যে আমরা মাঝারি ও ক্ষুদ্র কৃষকদের কথা চিন্তা করে তাদের ধান যেন সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে পারে সেই লক্ষে একটি তালিকা করা হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. জাকারিয়া মুস্তফা বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ধান ও চালের বরাদ্দ লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছি। এখন আমরা উপজেলা খাদ্য সংগ্রহ মনিটরিং কমিটির মিটিং শেষে এ সপ্তাহের মধ্যে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হবে। আমরা যখন গুদামে ধান নেয়া শুরু করবো অবশ্যই কৃষকরা লাভবান হবেন। বাইরে ধানের যে দাম রয়েছে তার বিপরীতে সরকার ২৬ টাকা কেজি ধরে কেনার নির্দেশনা দিয়েছে। ২৬ টাকা কেজি ধরে যদি কৃষকরা ধান বিক্রি করেন অবশ্যই কৃষরা লাভবান হবেন।
মোসাইদ রাহাত/এমএএম/পিআর