একটি ব্রিজের জন্য ২০ হাজার মানুষের ভোগান্তি
দুর্ভোগ লাঘবে ব্রিজ করার প্রতিশ্রুতিতে নির্বাচনে জয় পেয়ে বারবার জনপ্রতিনিধি পাল্টালেও কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওয়ের মাইজপাড়া খালের কাঠের সাঁকোটি পরিবর্তন হয়নি দীর্ঘ ২০ বছরেও। প্রতি বর্ষায় ঢল ও বানের পানিতে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া সাঁকোটি দিয়ে ঝুঁকিতে চলাচল করছে চার গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এদের মাঝে নিয়মিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। অনেক সময় মরদেহও দাফনের জন্য আনতে এ নড়বড়ে সাঁকো দিয়েই। দুর্ভোগ লাঘবে আর প্রতিশ্রুতি নয় এবার একটি স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ চান এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদগাঁও ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ গ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য মাইজপাড়ার অর্ধলাখ মানুষের বসতি। এদের প্রায় হাজার দশেক মহাসড়কের পাশের মেহেরঘোনাস্থ কবরস্থান ও ক্ষেতের মাঠের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। মেহেরঘোনা এলাকায় এদের আসতে মাইজপাড়া খাল পার হয়েই আসতে হয়। এটি পারাপারে প্রাচীনকাল থেকেই বছর বছর বাঁশের সাঁকো করা হতো। বিগত দুই যুগ ধরে এটি কাঠের সাঁকোতে উন্নীত হয়েছে। চাষাবাদসহ জীবন সম্পর্কিত নানা প্রয়োজনে মেহেরঘোনার চাষি, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকজনও এ সাঁকো ব্যবহার করেই সহজে পশ্চিমাংশে যোগযোগ ও যাতায়ত করেন। দিনেদিনে যাতায়ত বাড়লেও ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের সাঁকোটি পরিবর্তন হচ্ছে না।
স্থানীয় অধিবাসী আবু হেনা সাগর জানান, সাঁকোর এপার-ওপারে ভোটার সংখ্যা অনেক। তাই প্রতি ৫ বছর পর নির্বাচন এলে প্রার্থীরা সাঁকোর স্থলে পাকা ব্রিজ করার উদ্যোগ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট আদায় করেন। কিন্তু জয় পেয়ে গেলে পাঁচ বছরে আর কেউ খবর রাখে না। এ কারণে বিগত দুই যুগেও কাঠের সাঁকোটি পরিবর্তন হয়নি।
উত্তর মাইজপাড়ার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন জানান, ব্রিজের পশ্চিমপারে কেউ মারা গেলে সাঁকো পার হয়েই মরদেহটি মেহেরঘোনা মসজিদ মাঠে এনে জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানে দাফন করাতে হয়। সাঁকো যখন নড়বড়ে থাকে তখন গাড়ি করে ৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে জানাজার জন্য মরদেহ আনতে হয়। জেলা পরিষদের সদস্য, সরকার দলীয় এমপিসহ নানা সংস্থা চাইলেই অল্পতে ব্রিজটি করে দিতে পারে। কিন্তু সদিচ্ছার অভাবে এলাকাবাসীকে ভুগতে হচ্ছে।
ঈদগাঁও ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রশীদ বলেন, চার যুগ আগে খালের ওপর একটি ছোট কালভার্ট নির্মাণ হয়েছিল। ২০-২৫ বছর আগে এক বর্ষায় তা ঢলের পানির তোড়ে ভেঙে যায়। এরপর থেকে স্থানীয়রা বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপার হতো। বিগত দুই বছর আগে নিজেদের অর্থে কাঠের সাকোঁটি তৈরি করা হয়েছিল। যা এখন নড়বড়ে হয়ে আছে। চলাচলের গুরুত্ব বাড়ায় এখানে একটি স্থায়ী ব্রিজ দরকার। স্থানীয় এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল দেড় বছর আগে ব্রিজটি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তা বাস্তবায়নের হয়নি। আমি ইউনিয়ন পরিষদেও ব্রিজ চেয়ে আবেদন করেছি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমেও এলাকাবাসীকে ভুগতে হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম জানান, গুরুত্ব অনুধাবন করে ব্রিজটি করে দিতে উপজেলায় প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ মিললে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-২ ও ঈদগাঁও এলাকার সদস্য সোহেল জাহান চৌধুরী বলেন, সদর আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে একাধিকবার বিজটি করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এবারও নির্বাচিত হওয়ার পর একইভাবে ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্রিজটি করার। তাই এ বিষয়ে নজর দেয়া হয়নি। এখনও যেহেতু ব্রিজটি করা হয়নি, তাই জেলা পরিষদের আগামী মিটিংয়ে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনা তোলা হবে। জনদুভোর্গ লাঘবের চেষ্টা করা হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/জেআইএম