দিনে ৮০ টাকা পায় রনি
সাতক্ষীরা সদরের থানাঘাটা বউবাজার এলাকার রনি সরদার (১৪)। তার জন্মের কিছুদিন পর থেকেই নিখোঁজ মা। তিনি বেঁচে আছেন কি মারা গেছেন সেটিও জানে না রনি। বাবা বাবু সরদার থেকেও নেই। বাবা-মাকে হারিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে জীবন সংগ্রামে নেমে পড়েছে রনি। শহরের পলাশপোল চৌধুরীপাড়া মোড়ের সাইদ প্লাস্টিক সার্জারি নামে একটি দোকান শ্রমিকের কাজ করে সে।
শিশু শ্রমিক রনি সরদার জানায়, জন্মের এক বছর পর তার মা অপরিচিত একজনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাতে কাজের উদ্দেশ্যে যান। তাকে নানির কাছে রেখে যান। এরপর থেকে তার মায়ের কোনো খোঁজ নেই। বেঁচে আছেন না মারা গেছেন সেটিও জানে না সে।
রনি সরদার বলে, মাকে নানা অনেক খুঁজেছে কিন্তু কোনো সন্ধান মেলেনি। ১৩ বছর মাকে দেখিনি। মা বলে ডাকার মত কেউ নেই আমার। বাবা থেকেও নেই। মা চলে যাওয়ার পর বাবাও আর খোঁজ নেয় না। অন্যত্র আবার বিয়ে করেছে। বাবা বাবু সরদার ভ্যানচালক। কখনো কখনো চলার পথে দেখা হয় কিন্তু কথাও বলেন না। আমিও বাবার সঙ্গে এখন কথা বলি না। একবার আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গালিগালাজ করেছিলো সেই থেকে আর বাবার বাড়িতেও যাওয়া হয় না। তিন বছর আগে থেকে এই মেকানিকের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। দিনে ৮০ টাকা পাই তাতেই আমার দিন চলে যায়।
সাইদ প্লাস্টিক সার্জারি দোকানের মালিক সাইদ হোসেন বলেন, তিন বছর আগে রনি আমার দোকানে কাজ করে। দিনে তাকে ৮০ টাকা করে দেই। এছাড়া খাওয়া-দাওয়া একসঙ্গে করি। আমার একটি মেয়ে জন্মের পর মারা গিয়েছিল। আমি রনিকে নিজের সন্তানের মতই দেখি। আর রনি খুব ভালো ছেলে। আমি রনিকে বলেছি যতদিন আমার কাছে থাকবে আমি ততদিন তাকে সহযোগিতা করবো। খুব যত্ন করি রনিকে। আমিও খুব গরীব মানুষ। মা অন্ধ। মানুষের কষ্টটা আমি বুঝি তাই ওকে অবহেলা করি না।
পলিথিনের বেড়ার খুপড়ি ঘরে বসতি রনির নানা ভ্যানচালক বসির সরদারের। তিনি বলেন, ১৫ বছর আগে বাবু সরদারের সঙ্গে মেয়ে পলি আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর মেয়েটা ঢাকায় যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ। এক বছর বয়সে রনিকে রেখে যায়। রনির বাবাও অন্যত্র বিয়ে করলো। মেয়েটিরও কোনো হদিস নেই। চেষ্টা করেও সন্ধান মেলেনি। রনি এখন শ্রমিকের কাজ করে, তাতেই কোনো রকমে দিন পার হয় রনির।
আকরামুল ইসলাম/আরএআর/জেআইএম