শেওলার পাঁচ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোট পেয়েছে পরিবার
গোপালগঞ্জে বখাটেদের উত্ত্যক্তের বলি মেধাবী স্কুলছাত্রী আরজু মনির (শেওলা) আত্মহত্যার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে অপরাধীরা। আরজু মনিকে উত্ত্যক্তকারী রাহাত শরীফকে এখনো গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
এদিকে, মেয়ের মৃত্যুর শোকে কাতর মা-বাবাকে এ ঘটনায় মামলা না করতে নানা রকম চাপ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বখাটেরা। ফলে মেয়ের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের বিচার চাইতে পারছেন না অসহায় বাবা-মা।
গত শনিবার (২০ এপ্রিল) গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর শরীফপাড়ার সৌদি প্রবাসী নিজাম উদ্দিন শরীফের মেয়ে ও গোপীনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী আরজু মনি আত্মহত্যা করে। স্থানীয় বখাটে রাহাত শরীফ ও তার সহযোগীদের উত্ত্যক্তের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আরজু মনি।
শোয়ার ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে। আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোট লিখে যায় আরজু মনি।
পাঁচ পৃষ্ঠার সুইসাইড নোটে স্কুলছাত্রী আরজু মনি লিখেছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। ও মা, তুমি আমাকে মাফ করে দিও। আমি চাই না আমার মা-বাবার মান সম্মান নষ্ট হোক। আমি আগেই এখানে (বাড়িতে) না থাকার জন্য তোমাদের বলেছিলাম। কিন্তু তোমরা গেলে না। আমি মৃত্যুর পর তোমরা আর এখানে থেকো না। কারণ এখানে থাকলে কেউ আর লেখাপড়া শিখতে পারবে না। তাই তোমাদের কষ্ট হলেও অন্য কোথাও চলে যেও।
সুইসাইড নোটে আরজু মনি আরও লিখেছে, সত্যি, মা রাহাতের সঙ্গে আমার কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু রাহাত বা অন্য কেউ আমার নামে যে মিথ্যা কথা বলেছে তার বিচার আল্লাহ করবে। আল্লার কাছে বিচার দিলাম। আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা।
আরজু মনির মা লতিফা বেগম বলেন, গোপীনাথপুর শরীফপাড়ার রেজাউল হক শরীফের ছেলে বখাটে রাহাত শরীফ ও তার বন্ধুরা বেশ কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় পথরোধ করে মেয়েকে আজেবাজে কথা বলতো। আমাদের বাড়ির সামনে এসে রাহাত ও তার বন্ধুরা প্রতিদিন আড্ডা দিতো। আমার মেয়ে ঘর থেকে বের হতে পারতো না। তাকে কটূক্তি ও আজেবাজে ইঙ্গিত করতো রাহাত ও তার বন্ধুরা।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে রাহাত শরীফের অভিভাবকদের কাছে কয়েক দফায় অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। বরং হিতে বিপরীত হয়েছে। স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি প্রবাসী। আমার কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় ছয় মেয়েকে নিয়ে আমাকে বাড়িতে থাকতে হয়। এক মাস আগে বখাটে রাহাত আমার মেয়েকে তুলে নিয়ে পাশের পুকুরিয়া এলাকায় তার খালার বাড়িতে রাখে। একদিন পর সেখান থেকে আমরা মেয়েকে উদ্ধার করি।
লতিফা বেগম বলেন, মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের জানানো হয়। পরে গ্রাম্য সালিশে বখাটে রাহাতকে তিরস্কার করা হয়। এরপর থেকে লোকলজ্জা ও ভয়ে আমার মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও রাহাত এসব থেকে বিরত হয়নি। সে তার বন্ধুদের নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে মেয়েকে উত্ত্যক্ত করতো। প্রতিবাদ করলে আমাদেরকে বাড়ি থেকে উৎখাতের হুমকি দিতো রাহাত। বখাটে রাহাত শরীফের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আমার মেয়ে। এখন আমাকে মুখ না খুলতে হুমকি দিচ্ছে সে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
গোপীনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেওয়াজ মোহাম্মদ হাবিব আহসান বলেন, আরজু মনি ব্যবসা শিক্ষা বিভাগের একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল। সে লেখাপড়ায় বরাবরই ভালো ফলাফল করতো। নিয়মিত স্কুলে আসতো। এভাবে তার চলে যাওয়া দুঃখজনক।
গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আওয়াল হোসেন রানা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে স্কুলছাত্রী আরজু মনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে তার মরদেহ গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। তবে তার আত্মহত্যার বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা হয়নি। অভিযোগ পেলে এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এস এম হুমায়ূন কবীর/এএম/এমএস