গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপে
কোনো গাড়ি উঠলেই কেঁপে ওঠে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতু। বারবার জোড়াতালি দিয়ে সচল রাখা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহবাজপুরের তিতাস নদীর ওপরের এই সেতুটি যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়ে সিলেট বিভাগের চার জেলার সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযেগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি বড় ধরনের প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তবে সবকিছু জেনেও প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কয়েক হাজার যানবাহন এই সেতু দিয়ে চলচাল করছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কগুলোর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অন্যতম। প্রতিদিন এই মহাসড়ক দিয়ে বাস, পণ্যবোঝাই ট্রাক-পিকআপ ভ্যানসহ নানা ধরনের গণপরিবহন চলাচল করে। সংখ্যার হিসেবে যা কয়েক হাজার হবে। এই মহাসড়কের শাহবাজপুর সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ হয়ে আছে। সেতুর দুই পাশের রেলিংয়ের বেশ কিছু অংশ খসে পড়েছে বহু আগেই।
১৯৬৩ সালে নির্মিত এই সেতুর মাঝখানে বেইলি সেতু বসিয়ে কোনো রকমে যান চলাচল স্বভাবিক রাখা হয়েছে। মাঝে-মধ্যেই বেইলি সেতুতে ওঠার সময় চাকা দেবে গিয়ে যানবাহন আটকে যায়। তখন সেতুর দুইপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আর গরমের দিনে যাত্রীদের এ ভোগান্তি বেড়ে যায় কয়েকগুন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেতুর দুই পাশে ১৫ টনের অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ করে সাইনবোর্ড টানিয়েছে। তবে সওজ’র এই সাইনবোর্ডে কোনো কাজ হচ্ছে না। উল্টো ১৫ টনের অধিক যানবাহন সেতু দিয়ে চলাচল করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে যে কোনো মুহূর্তে সেতুটি ধসে পড়ে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
নড়বড়ে এই সেতুর পাশে নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে গত ২০১৭ সালের ১০ জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নতুন সেতু নির্মাণের পর এ সেতুটিও সংস্কার করা হবে। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো সেতুর নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। এর ফলে বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী ট্রাকচালক মো. সজিব জানান, এই সেতু দিয়ে গাড়ি চালানোর কোনো উপায় নেই। এটা খুব ভয়াবহ একটা সেতু, যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
বাসচালক শামছু মিয়া বলেন, বিকল্প সেতু বা সড়ক না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলাচল করি। কোনদিন যে বাস নিয়ে নিচে পড়ে যাই ঠিক নাই। দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন সেতুটি চালু করে দেয়া প্রয়োজন।
আরেক ট্রাকচালক রাসেল উদ্দিন বলেন, গাড়ি নিয়ে সেতুতে ওঠামাত্র কাঁপুনি শুরু হয়। মনে হয় এই বুঝি সেতুটা ভেঙে নদীতে পড়ল আমার গাড়ি। এই সমস্যা সমাধানে নতুন সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করে সেটি চালু করতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামীম আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, নতুন সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে।
আজিজুল সঞ্চয়/আরএআর/এমকেএইচ