গাছতলায় পাঠদান, বৃষ্টি নামলেই ছুটি
শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের চর ডোমসার গ্রামে অবস্থিত চর ডোমসার বে-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘরটি কালবৈশাখী ঝড়ে উড়ে পাশের ফসলি জমিতে পড়ে আছে। ফলে গাছতলায় চলছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ডোমসার ইউনিয়নের চর ডোমসার, ভাসকদ্দি ও বেদেপল্লী গ্রামে স্কুল না থাকা গ্রামগুলোর মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৭০ সালে স্থানীয় সিরাজুল হক মোল্লা বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০০৩ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে নিয়মিতভাবে পাঠদান শুরু হয়। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে। সেই থেকে খোলা আকাশের নিচে গাছতলায় ক্লাস হচ্ছে। প্রতি বছরই স্কুল ঘরটি ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমান শিক্ষার্থী ১৫০ জন। ভবন না থাকায় প্রতি বছরেই শিক্ষার্থী কমছে। বিদ্যালয় শিক্ষক আছেন মাত্র তিনজন ।
শনিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে চর ডোমসার গ্রামে এই বিদ্যালয় অবস্থিত।বিদ্যালয়ের নামে ৩৯ শতাংশ জমি। জমির মাছখানে বিদ্যালয়ের খোলা ভিটি। ভিটির উত্তর পাশে দুইটি তালগাছ ও শিমুল গাছ, সেই গাছের নিচে চলছে পাঠদান। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একই জায়গায় পাশাপাশি বেঞ্চে বসা। দক্ষিণ পাশের ফসলি জমিতে বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি দমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে।
শিক্ষকরা জানান, রোদের কারণে আশ্রয় নেয়া হয়েছে গাছতলায়। বৃষ্টি হলে এখানে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি হলে ক্লাস বন্ধ থাকে। খোলা জায়গা হওয়ায় তাই প্রায়ই এখানে মলমূত্র পাওয়া যায়। সকালে এসে পরিষ্কার করে ক্লাস নেয়া হয়। খবই কষ্টে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজিয়া আক্তার ও শারমিন আক্তার বলেন, তালগাছ ও শিমুলগাছ পুরোপুরি রোদ ঠেকায় না। বৃষ্টি শুরু হলে স্কুল ছুটি দিয়ে দিতে হয়। এই পরিবেশে উপকরণও ব্যবহার করা যায় না। এভাবে পাঠদানে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হয়। এ অবস্থায় শিক্ষার প্রতি কোমলমতি শিশুদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে। তাই একটি ভবন প্রয়োজন, যাতে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া, রাজিব, জিহাদ, মারিয়া ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী রাতুল বলে, সামনে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা। এই পরিস্থিতিতে খুব সমস্যা হচ্ছে। তাই আমাদের একটি ভবন হলে লেখাপড়া ভালো হতো।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবক মোতালেব মোল্লা বলেন, এ অবস্থায় ছেলে-মেয়েরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না। পড়াশোনার খুব ক্ষতি হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফারজানা আক্তার বলেন, বিদ্যালয়ের কাগজপত্র, ফাইলপত্র, চক-ডাস্টার ইত্যাদি ব্যাগে ভরে প্রতিদিন বাড়িতে নিতে হয়। এত ছেলে-মেয়ে নিয়ে এলাকার কোনো বাড়িতেও উঠতে পারছি না।
তিনি বলেন, শুনলাম বে-সরকারি বিদ্যালয়গুলো এমপিওভুক্ত হচ্ছে। আমাদের স্কুলটি এমপিওভুক্ত হলে আর একটি ভালো ভবন হলে এলাকার ছেলে-মেয়েরা সঠিকভাবে লেখাপড়ার সুযোগ পেত।
ডোমসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চাঁন মিয়া মাদবর বলেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করতে সকল কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এমপিওভুক্ত হবে।
সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নিয়ামত বলেন, এই বিদ্যালয়ের ঘরটি ঝড়ে পড়ে গেছে। শুনেছি বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহাবুর রহমান শেখ বলেন, স্কুল ঘরটি ঝড়ে উড়ে গেছে । আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘর তৈরি করতে ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বড় ধরনের বরাদ্দ দেয়া যায় কি-না সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।
ছগির হোসেন/আরএআর/জেআইএম