ধর্ষিত মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে কাঁদছেন পাকিস্তানি মা
মাকে নিয়ে ছয় মাসের ভিসায় বাংলাদেশে এসেছিল পাকিস্তানি কিশোরী। কিন্তু এরই মধ্যে মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণের শিকার মেয়ের সুচিকিৎসা আর নিরাপত্তা পেতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন পাকিস্তানি মা।
শনিবার দুপুরে টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদের মেয়ে মর্জিনার সহায়তায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন মা। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসা চলছে কিশোরীর।
ছয় মাসের ভিসা নিয়ে মায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে বেড়াতে এসে প্রথমে অপহরণ ও পরে ধর্ষণের শিকার হয় ওই কিশোরী। সে পাকিস্তানের নিউ করাচির পুপার হাইওয়েজ রোডের বাসিন্দা এবং সেখানকার একটি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বলেন, ২০ বছর আগে টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা পোশাক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বেশ কয়েক বছর একাই কাটে আমাদের সংসার। পরে আমাদের সংসারে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। ১৫ বছর আগে জানতে পারি হুমায়ুন আঁততায়ীর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে এ খবর পরবর্তীতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমার স্বামী জীবিত এবং পাকিস্তানেই আছেন বলে জানতে পারি।
তিনি বলেন, গত বছর খবর পাই বাংলাদেশে বসবাসকারী আমার শাশুড়ি খুবই অসুস্থ। মেয়েরও খুব ইচ্ছা ছিল দাদিকে দেখার। তাই ছয় মাসের ভিসা করে মেয়েকে নিয়ে শাশুড়িকে দেখতে স্বামীর বাড়ি বেড়াতে আসি। বাংলাদেশে এসে টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে উঠি। এখানে ওঠার পর থেকে আরেক ভাসুর আবুল হোসেনের বখাটে ছেলে আল-আমিন আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে। বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনার পরপরই পারিবারিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। তবে আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসার খবর পেয়ে বখাটে আল-আমিন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৬ এপ্রিল রাতে একদল সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আল-আমিন। পরে মেয়েকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এরপরও মেয়েকে ফিরে পেতে নানাভাবে চেষ্টা চালাই আমি।
পুলিশ জানায়, ১৭ এপ্রিল আল-আমিনসহ তিনজনকে আসামি করে গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন পাকিস্তানি কিশোরীর মা। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামির মা আনোয়ারা বেগমকে (৪৭) গ্রেফতার করা হয়। আসামির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহিষাকান্দি মোড়ের একটি বাসা থেকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। পরে কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের পরীক্ষা বা হাসপাতালে ভর্তি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমি এখনো জানি না। ধর্ষণের ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও ধর্ষক গ্রেফতার না হওয়ায় বিচার প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এখনো মেয়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না হওয়ায় পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি আমরা। পাকিস্তান গিয়ে মেয়ের বাবাকে কী জবাব দেব আমি। এমন জানলে বাংলাদেশে আসতাম না আমরা।
কিশোরীর চিকিৎসা প্রাপ্তির বিষয়ে সহায়তাকারী মর্জিনা বলেন, আমার চাচাতো বোনকে ধর্ষণ করেছে আল-আমিন। আল-আমিনকে না পেয়ে তার মা আনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। চাচাতো বোনকে চিকিৎসায় সহায়তা করায় আমার বাবা এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে ধর্ষক আল-আমিন ও তার পরিবারের লোকজন।
গোপালপুর থানা পুলিশের ওসি হাসান আল মামুন বলেন, ধর্ষক আল-আমিনকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাকিস্তানি কিশোরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, কিশোরীর ধর্ষণের আলামত নেয়া পরীক্ষার ফলাফল এখনো আমরা পাইনি। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর সুচিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
১৬ এপ্রিল রাতে একদল সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় চাচার বাড়ি থেকে কৌশলে পাকিস্তানি ওই কিশোরীকে অপহরণ করে আল-আমিন। পরে কিশোরীকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।
১৭ এপ্রিল আল-আমিনসহ তিনজনকে আসামি করে গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন কিশোরীর মা। ১৯ এপ্রিল ধর্ষক আল-আমিনের মা আনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহিষাকান্দি মোড়ের এক বাসা থেকে বন্দি অবস্থায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়।
আরিফ উর রহমান টগর/এএম/এমকেএইচ