অবশেষে মুক্তি পেলেন সেই দিনমজুর
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মোচাগড়া গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়েও বকেয়া বিলের মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়া দিনমজুর আব্দুল মতিন মিয়া কারামুক্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) কর্তৃক কুমিল্লা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জামিন চাওয়া হলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে আব্দুল মতিন মিয়া কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ব্লাস্ট কুমিল্লা শাখার প্রকল্প কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মো. সানা উল্লাহ।
এদিকে এ ঘটনা তদন্তের জন্য বৃহস্পতিবার দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিনদিনের মধ্যে ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিকেলে তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মৃনাল কান্তি চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও বাঙ্গরা-দৌলতপুর জোনাল অফিসের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমানকে সদস্য করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত দল ওই এলাকায় গেলে স্থানীয় উৎসুক লোকজন ওই বাড়িতে ভিড় জমায়। এ সময় তারা তদন্ত কর্মকর্তার নিকট দায়ীদের শাস্তির দাবি জানান।
ব্লাস্ট কুমিল্লার শাখার প্রকল্প কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মো. সানা উল্লাহ বলেন, বিষয়টি জেনে আমরা আদালতে তার জামিনের আবেদন করি। বৃহস্পতিবার বিকেলে কুমিল্লা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সোহেল রানা নিরপরাধ আবদুল মতিনের জামিন মঞ্জুর করেন। ৭টার দিতে তাকে কারাগার থেকে ব্লাস্ট কার্যালয়ে নিয়ে আসার পর রাত ৮টার দিকে তাকে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
আব্দুল মতিন মিয়ার স্ত্রী আমেনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা খুব গরিব। টাকা দিয়েও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। তারপরও বকেয়া বিলের মামলায় আমার স্বামীকে জেলে যেতে হয়েছে। আমি দায়ীদের বিচার চাই।
দেবিদ্বার জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ও তদন্ত কমিটির প্রধান মৃনাল কান্তি চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, আব্দুল মতিন নামের গ্রাহকের মিটারটি একই গ্রামের সফিকুল ইসলামের বাড়িতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু সফিকুল ইসলামও বিষয়টি অফিসকে জানায়নি এবং বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। আব্দুল মতিন নোটিশ পেয়েও তার ঘরে বিদ্যুৎ না থাকায় বিষয়টি আমলে নেয়নি। যার ফলে এ ঘটনাটি ঘটেছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, মুরাদনগরের মোচাগড়া গ্রামের দক্ষিণপাড়ার বিদ্যুৎহীন ২৫৬টি পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য চার বছর আগে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদ্যুৎ অফিসের দালাল আবুল কালাম আজাদ ও আবুল বাশার প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে মিটার প্রতি ১০/১৫ হাজার টাকা আদায় করে। ওই সময় আব্দুল মতিন মিয়ার নামেও কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎ সংযোগের ফাইল অনুমোদন করে। কিন্তু আব্দুল মতিন মিয়া দালাল চক্রের হাতে ৪ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকা দিতে না পারায় তাকে সংযোগ দেয়া হয়নি।
কিন্তু বিদ্যুৎ অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে অর্থের বিনিময়ে আব্দুল মতিন মিয়ার ছবি পাল্টিয়ে একই বাড়ির মৃত আব্দুস ছামাদের ছেলে সফিকুল ইসলামের ছবি লাগিয়ে দেয়া হয়। বিগত ২০১৫ সালের ২২ মার্চ আব্দুল মতিন মিয়ার নামীয় মিটারটি প্রায় পাঁচশত গজ দূরে সফিকুল ইসলামের ঘরে সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ১৭ মাস বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখা হয়। এতে ১৭ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল চার হাজার সাত টাকা আদায়ের জন্য কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর চান্দিনা অফিসের এজিএম লক্ষ্মণ চন্দ্র পাল বাদী হয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় মঙ্গলবার রাতে থানার এসআই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আব্দুল মতিন মিয়াকে গ্রেফতার করে মুরাদনগর থানায় নিয়ে আসে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লার কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
কামাল উদ্দিন/আরএআর/এমএস