ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

৩৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পালাতে চেয়েছেন আ.লীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি | বাগেরহাট | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৯

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অস্ত্র ও গুলিসহ আটক বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান শামীম বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে পলাতক ছিলেন।

সরকারি-বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক থেকে একই জমি একই ফ্লাটের জমি জামানত রেখে অভিনব কায়দায় ৩৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে ব্যাংকের দৃষ্টিতে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন মুজিবর। তিনি দেশের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন এতদিন। বৃহস্পতিবার অস্ত্র ও ১০ রাউন্ড গুলিসহ বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে তাকে আটক করে এভিয়েশন সিকিউরিটি গ্রুপের (এভসেক) সদস্যরা।

মুজিবর রহমান শামীম বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় নির্বাচিত চেয়ারম্যান। শাসকদলের আশ্রয়ে থেকে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এই নেতা চিতলমারী-বাগেরহাটসহ পাশের পিরোজপুর জেলাতে দাপিয়ে বেড়ালেও ব্যাংকের দৃষ্টিতে পলাতক ছিলেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ব্যাংকের টাকা মেরে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া শামীম প্রথমে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ২০১১ সালে চিতলমারী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

চিতলমারীর উমাজুড়ি গ্রামের মৃত গফুর মোল্লার ছেলে শামীম আওয়ামী লীগ দলীয় উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ২০১৪ সালের ২৩ মার্চ। উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে তার শূন্য আসনে ২০১৪ সালের অক্টোবরে স্ত্রী বিউটি আক্তারকে সন্তোষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে আনেন।

ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে দু’হাত ভরে টাকা উড়িয়ে ইউপি চেয়ারম্যান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, স্ত্রীকে ইউপি চেয়ারম্যান বানিয়ে থেকে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। ব্যাংকের খাতায় পলাতক মুজিবর রহমান শামীম চিতলমারীর পাশের জেলা পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকায় গড়ে তুলেছেন বিশাল এক ইটের ভাটা। এ কাজে তিনি কৃষকসহ সরকারের খাস জমি দখল করেছেন। নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিপাগলা গ্রামে প্রায় ৫০ একর জমির ওপরে গড়ে তুলেছেন রিসোর্ট, মাছ ও গরুর খামার। রিসোর্টে আলিশান তিনটি ভবন গড়ে তুলেছেন তিনি।

হরিপাগলা গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জানা যায়, শামীমের রিসোর্টে প্রভাবশালী নেতা ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রায় নিয়মিত আসর বসাতেন। সেখানে চলে নানা অপকর্ম।

ব্যাংকের টাকা মেরে নিজ এলাকা চিতলমারী ছেড়ে পিরোজপুরে সেজেছেন দানবীর। বাগেরহাট জেলা মানবাধিকার কাউন্সিলের সভাপতি, বাগেরহাটের সাংস্কৃতিক সংগঠন দলছুটের সভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। অর্থের জোরে চিতলমারী থেকে প্রকাশিত চিতলমারীর অন্তরালে ও পিরোজপুর থেকে প্রকাশিত তথ্য দর্পন নামের দুটি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতিও হয়েছেন। চিতলমারী ও নাজিরপুর-পিরোজপুরের এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তিদের সঙ্গে শামীমের সখ্যতা রয়েছে।

ব্যাংক কর্মকর্তা ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে এতদিন নিজের অপকর্ম চাপা দিয়ে রাখলেও সম্প্রতি তা ফাঁস হয়ে যায়। স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশ হয় তার নানা অপকর্ম নিয়ে সংবাদ। দানবীর সাজা শামীমের আসল রূপ প্রকাশিত হয়ে পড়ায় চিতলমারীসহ বাগেরহাট ও পিরোজপুরে তেলপাড় সৃষ্টি হয়।

উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম সম্প্রতি তারই উপজেলার ইউএনও মো. আবু সাঈদের বিরুদ্ধে কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করে আলোচনায় আসেন। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক তপন কুমারের নির্দেশে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জহিরুল আলম ১১ ফেব্রুয়ারি ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে গা ঢাকা দেন শামীম।

তবে চিতলমারীর লোকজন জানিয়েছেন, উপজেলা চেয়ারম্যান শামীম নিজের দুর্নীতি ঢাকতে ইউএনওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভুয়া অভিযোগ তুলেছেন। শামীম বড় ধরনের প্রতারক।

শওকত আলী বাবু/এএম/এমকেএইচ

আরও পড়ুন