নুসরাত হত্যা : শামীম-নূর উদ্দিনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহদাত হোসেন শামীম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
রোববার (১৪ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন) তাহেরুল হক চৌহান জানান, নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম আসামি নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক তথ্য উঠে এসেছে। তবে অন্য আসামিদের গ্রেফতার ও তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
অবশ্য পরবর্তীতে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে ১১ এপ্রিল রাতে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে নূর উদ্দিন ও পরদিন ১২ এপ্রিল সকালে মুক্তাগাছা থেকে শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনবেস্টিগেশন (পিবিআই)। নূর উদ্দিন নুসরাত হত্যা মামলার ২নং ও শাহাদাত হোসেন শামীম ৩নং আসামি।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ছয়জন এবং এজাহার বহির্ভূত সাতজন রয়েছেন। এই মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ ১১ জন আসামি পুলিশের রিমান্ডে রয়েছেন।
গত ৯ এপ্রিল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহম্মেদের আদালত নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন। পর দিন ১০ এপ্রিল একই আদালতে অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলাকে সাত দিনের এবং আবছার উদ্দিন ও আরিফুল ইসলামকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেয়া হয়। ১১ এপ্রিল উম্মে সুলতানা পপি ও যোবায়ের হোসেনকে পাঁচদিন করে রিমান্ড দেন একই আদালতের বিচারক সরাফ উদ্দিন আহম্মেদ।
এছাড়া ১৩ এপ্রিল (শনিবার) মামলার আরেক আসামি জাবেদ হোসেনকে সাতদিনের রিমান্ড দিয়েছেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন।
উল্লেখ, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। এসময় মাদরাসার এক ছাত্রী সহপাঠী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের ছাদে যান। সেখানে মুখোশপরা ৪/৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। এতে নুসরাত অস্বীকৃতি জানালে তারা গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকেলে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।
রাশেদুল হাসান/এমবিআর