বাংলাদেশে পড়ালেখা করে আমি প্রধানমন্ত্রী, আমার বন্ধু মন্ত্রী
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং বলেছেন, ভালো ডাক্তার হতে হলে আগে ভালো মানুষ হতে হবে। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে তাদের মন জয় করতে হবে। মানবিক হতে হবে। মানুষের জন্য কাজ করার অনেক সুযোগ আছে ডাক্তারদের। শুধু চিকিৎসা সেবা নয় সামাজিক-রাজনৈতিক অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারদের অবদান রাখার সুযোগ আছে।
তিনি বলেন, আমি চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছি। কিন্তু আমার পেশাকে ছাড়তে পারিনি। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমি চাকরি না করে, বিদেশে না গিয়ে ভুটানের মানুষকে নিয়ে ভেবেছি। তাদেরকে বুঝতে চেষ্টা করেছি। তাদেরকে নিয়ে কাজ করেছি। তাই আজ আমি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
আরও পড়ুন >> এক পরীকে নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছে তার বাবা
রোববার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভা ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময়ের স্মৃতিচারণ করে ডা. লোটে শেরিং বলেন, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত আমি ও আমার সহপাঠী, অর্থাৎ আমার মন্ত্রিপরিষদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ময়মনসিংহ শহরের বাঘমারা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের ২০ নম্বর কক্ষে থেকেছি। এখনো আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করছি। দীর্ঘসময়ে আমাদের মাঝে কোনোদিন মনোমালিন্য হয়নি। আমার সেই সহপাঠী বন্ধুর কারণেই আজ আমি প্রধানমন্ত্রী। তিনিই আমাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অনেক সহপাঠীর নাম উল্লেখ করে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ডা. লোটে শেরিং। তিনি বলেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াশোনা করে আজ আমি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী, আমার সেই বন্ধু স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আমার আরও অনেক বন্ধু অনেক ভালো জায়াগায় আছেন। তাদের জন্য শুভ কামনা।
লোটে শেরিং আরও বলেন, আমাদেরকে সকল ভোদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশটাকে নিজের ভাবতে হবে। বিশেষ করে ডাক্তারদের মানবিক হতে হবে।
সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং তার শিক্ষা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে আসেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বাংলাদেশ সফরে এসে শিক্ষা জীবনের স্মৃতিবিজড়িত কলেজের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিজের স্মৃতি তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিংয়ের আগমনে সহপাঠী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ছিলেন বেশ আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ডা. লোটে শেরিং ক্যাম্পাসে তার স্মৃতিবিজড়িত বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন এবং তার ব্যাচমেটদের সঙ্গে একান্তে কিছু সময় কাটান। এর আগে ডা. লোটে শেরিং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। তাকে কাছে পেয়ে সহপাঠী ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা আবেগাপ্লুত হন।
সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ময়মনসিংহে পৌঁছালে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ডা. লোটে শেরিংকে স্বাগত জানান। এ সময় সহপাঠীদের ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হন তিনি।
তার আগমনে মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাঝখানে দুই দেশের পতাকা, দুই দেশের রাষ্ট্র প্রধানের ছবি, ব্যানার, পোস্টার দিয়ে সজ্জিত করা হয়। শহরজুড়ে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. টান্ডি দরজি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী লায়োনপু দিহেন ওয়াংমু, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ডা. উগেন ডেমা, বাংলাদেশের ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব জিএম সালেহ উদ্দিন, জেলা প্রশাসক ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার ও ময়মনসিংহ বিএমএ সভাপতি ডা. মতিউর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।
২৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হিসেবে লোটে শেরিং ১৯৯১ সালে বিদেশি কোটায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি হন। ১৯৯৯ সালে এমবিবিএস পাস করে ঢাকায় সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন।
২০১৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর ১৫ সেপ্টেম্বর ভুটানে অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে লোটে শেরিংয়ের রাজনৈতিক দল জয়লাভ করে। পরে লোটে শেরিংয়ের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। বন্ধু-সহপাঠীদের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের লক্ষ্যে ২০ বছর পর ময়মনসিংহে আসেন লোটে শেরিং।
এএম/এমকেএইচ