বিনে পয়সায় ৫ হাজার মানুষকে পান্তা-ইলিশ খাওয়ালো আ.লীগ
বাঙালির সর্বজনীন উৎসব বৈশাখ। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদেশে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সীমান্ত শহর বেনাপোল ও শার্শায় নানা আয়োজনে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করা হয়েছে। বর্ণিল ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় নতুন বছরকে বরণ করেছে বেনাপোল ও শার্শাবাসী।
পাশাপাশি পাঁচ হাজার বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষকে পান্তা-ইলিশ দিয়ে আপ্যায়িত করেছে যশোরের শার্শা উপজেলা প্রশাসন ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগ। একসঙ্গে পাঁচ হাজার মানুষের জন্য বিনে পয়সায় পান্তা-ইলিশের আয়োজন করায় অবাক হয়েছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে এ আয়োজনের প্রশংসা করেছেন অনেকেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রশংসা করেছেন কেউ কেউ।
নববর্ষে মঙ্গল বার্তা নিয়ে দিনের শুরুতে বের করা হয়েছে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। পহেলা বৈশাখকে স্বাগত জানাতে ব্যাপক আয়োজন করে শার্শা উপজেলা পরিষদ ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগ। জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সকাল ৯টায় উপজেলা সদরে ও বেনাপোল বন্দরে মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। এতে আবহমান বাংলার চিরায়িত রূপ ও দেশজ সংস্কৃতি উপস্থাপন করা হয়েছে। সামনে-পেছনে ঢাকের বাদ্যের তালে তালে নৃত্য, আর সবার হাতে হাতে ছিল বড় আকারের বাহারি মুখোশ। গরুর গাড়ি, টেপা পুতুল আর বাঁশের কাঠামোতে মাছ পাখি ফুটে উঠেছে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য। সেই প্রতীক ধারণ করেছে সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহের চিহ্ন। সঙ্গে ছিল অমঙ্গলের আঁধার ঘোচানোর প্রত্যয়। বৈশাখের লাল-সাদার ভিড়ে ছিল সব বয়সের শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ।
রাজনৈতিক কোলাহলমুক্ত মঙ্গল শোভাযাত্রায় নববর্ষের ব্যানার ফেস্টুনসহ রঙবেরঙের পোশাকে গ্রাম-বাংলার অতীত ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলেছে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বাঙালি সংস্কৃতির আদি উৎসব, যা ডিজিটাল যুগেও শেকড়ের সন্ধানে ছোট বড় সবার মাঝে অনুপ্রেরণা জোগায়। স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন সংগঠন রঙ-ঢঙে গাঁয়ের আদলে সেজে ব্যানার ফেস্টুন সহকারে মঙ্গল শোভাযাত্রা বর্ণাঢ্য র্যালিতে অংশ নেয়।
সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে প্রাণের উৎসবে মাতেন নবীন-প্রবীণ সবাই। কেউ কেউ অংশ নেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সার্বজনীন এ উৎসবে মাতোয়ারা হন সব বয়সের মানুষ।
সবশেষে শার্শা উপজেলা পরিষদের মাঠ এবং বেনাপোল ফুলবল মাঠে একসঙ্গে পাঁচ হাজার মানুষের জন্য পান্তা-ইলিশ খাওয়ার আয়োজন করা হয়। শার্শা উপজেলা প্রশাসন ও বেনাপোল পৌর আওয়ামী লীগ এ আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার পাঁচ হাজার মানুষকে পান্তা-ইলিশ দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান বলেন, পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। দিনটিকে কেন্দ্র করে নানা আয়োজন করেছি আমরা। সেই সঙ্গে বেনাপোলে তিন হাজার এবং শার্শায় দুই হাজার মানুষের জন্য পান্তা-ইলিশের আয়োজন করেছি। সাধারণত পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পান্তা-ইলিশের দাম বেশি থাকে। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও খাওয়া হয় না। তাই গরিব-দুঃখী মানুষের কথা চিন্তা করে আমরা পাঁচ হাজার মানুষের জন্য বিনে পয়সায় পান্তা-ইলিশের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। এটি আমরা নিজ উদ্যোগে করেছি। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
এর আগে শার্শা ও বেনাপোলে মঙ্গল শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌসুমী জেরিন কান্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক এসএম আসিফ-উদ-দৌলা সরদার অলক, জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আলেয়া ফেরদৌস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জয়দেব কুমার সিংহ, বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশের ওসি আবু সালেহ মাসুদ করিম, উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ উপজেলার সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষ।
মো. জামাল হোসেন/এএম/এমকেএইচ