কমেছে ইলিশের দাম
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ আসতে এখনো বেশ কয়েকদিন বাকি। পয়লা বৈশাখের দিন সকালে পান্তা ইলিশ খাওয়া বাঙালির ঐতিহ্য না হলেও এখন সেটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতি বছর পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশের দাম হয় আকাশছোঁয়া। তবে বরিশালে ইলিশ মাছের মোকামে দেখা গেছে ঠিক উল্টো চিত্র। ইলিশের দাম বাড়ার বদলে কমেছে। মোকামে রয়েছে প্রচুর ইলিশ। পয়লা বৈশাখের জন্য এসব ইলিশ মজুত করছেন পাইকাররা।
বরিশালে ইলিশের মোকাম ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৯০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ২ হাজার ২৫০ টাকা। খুচরা বাজারে এসব মাছ বিক্রি করা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দামে।
রোববার একই সাইজের ইলিশের মণ দাম কমে ৭২ হাজার টাকায় এসেছে। সে হিসাবে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। খুচরা বাজারে এসব মাছ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি করা হয়েছে। তবে দাম কমলেও এটিকে অনেক বেশি দাম বলে মনে করছেন স্থানীয় ক্রেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর এ সময় অর্থাৎ পয়লা বৈশাখের এক সপ্তাহ আগে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। সে হিসাবে এবার মণ প্রতি ইলিশের পাইকারি দাম কমেছে ৮ হাজার টাকা।
বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের ইলিশ মোকামের একাধিক আড়তদার জানিয়েছেন, দাম কমে যাওয়ার কারণ বাজারে হিমাগারে রাখা প্রচুর ইলিশ সরবারহ করছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা। ফলে আগের চেয়ে দাম কমেছে। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ছয় মাস, এক বছর আগে থেকে হিমাগারে কম দামে ইলিশ কিনে মজুত করেছেন পাইকাররা। এরপর পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে চাহিদা বাড়ায় ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মজুত করা এসব ইলিশ বেশি দামে সরবরাহ করেছেন তারা। ফলে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে ইলিশের দাম কমে গেছে।
তবে হিমাগারে মজুত করা এসব মাছের সরবরাহ কমে গেলে আবারও ইলিশের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ইলিশ ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, হিমাগারে মজুত ইলিশ বিক্রি হয়ে গেলে দাম বাড়তে শুরু করবে। নববর্ষ যত এগিয়ে আসবে, ইলিশের চাহিদা ততই বেড়ে যাবে। পয়লা বৈশাখের দু’একদিন আগে এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়াবে।
রোববার সকালে নগরীর পোর্ট রোড মোকামে গিয়ে দেখা যায়, ইলিশের আমদানি অনেক কম। তবে সাধারণ ক্রেতাদের থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় সাইজের ইলিশ কেনার দিক থেকেও তারাই ছিলেন এগিয়ে। ক্রয় করা ইলিশ ককশিটে বরফ দিয়ে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে। যে পরিমাণ ইলিশ আসছে তার দুই-তৃতীয়াংশ প্যাকেটজাট হয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন আড়তদাররা।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই প্যাকেট ঢাকা পাঠানো হবে। নববর্ষ উৎসবে ঢাকায় ইলিশের চাহিদা আকাশচুম্বি। মূল্য পাওয়া যায় অনেক বেশি। ঢাকার আড়তদারদের চাহিদা অনুযায়ী বরিশালের আড়তদাররা প্যাকেটজাত করে প্রতি রাতে ট্রাকে ঢাকায় ইলিশ পাঠাচ্ছেন।
এদিকে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইলিশ মজুত করছেন। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ইলিশ মোকামে আসার আগেই ট্রলারযোগে নদীতেই ইলিশ কিনে নিচ্ছেন। পরে গোপন স্থানে এসব ইলিশ মজুত করে রাখছেন। ফলে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকামে ইলিশ আমদানি কমে গেছে।
নগরীর পোর্ট রোডের আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিৎ কুমার দাস মনু বলেন, ইলিশের আমদানি কম। তবে গত সপ্তাহের চেয়ে দাম কমেছে ইলিশের। গত সপ্তাহে প্রতি দিন আমদানি ছিল ৭০ থেকে ৮০ মণ। চলতি সপ্তাহে তা কমে প্রতিদিন আমদানি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ মণ।
ইলিশের আমদানি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এ সময়টাতে দেশের প্রধান কয়েকটি নদীর অভয়াশ্রমে ইলিশ ধরা পুরোপুরি বন্ধ থাকে। এ সময় অভিযানও চালায় মৎস্য অধিদফতর, কোস্টগার্ড নৌ-পুলিশের সদস্যরা। ফলে ইলিশের সরবরাহ কম।
অজিৎ কুমার দাস বলেন, মোকামে রোববার পাইকারি দর ছিল এক কেজি সাইজের ইলিশের মণ ৭২ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ ইলিশের মণ ছিল ৯০ হাজার টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি ইলিশের পাইকারি দাম পড়েছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা। তবে এ সাইজের ইলিশের আমদানি খুব কম। যে পরিমাণ আসে তার সবটুকু প্যাকেটজাত করে ঢাকায় পাঠানো হয়। মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের। আড়তদাররা এ সাইজের ইলিশকে বলেন এলসি সাইজ। এক সপ্তাহ আগেও এ মাছের মণ ছিল ৫৮ হাজার টাকা। রোববার মোকামে বিক্রি হয়েছে ৮ হাজার টাকা কমে ৫০ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম দেড়শ টাকা কমেছে। ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ২৮ হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগেও এ মাছের মণ ছিল ৩৭ হাজার টাকা। আড়াইশ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ বিক্রি হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। গত সপ্তাহে এ মাছের মণ ছিল ২০ হাজার টাকা। এ সপ্তাহে দুই হাজার টাকা কমেছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল দাস জাগো নিউজকে বলেন, অভয়াশ্রমগুলোতে জেলেরা মাছ শিকার করতে না পারায় বাজারে ইলিশের সরবরাহ কম। তবে মে মাসের শুরুতে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে বাজারে ইলিশ সরবরাহ বেড়ে যাবে। দামও কমে যাবে।
সাইফ আমীন/এএম/পিআর