ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

আমাকে কেন খাবার দেয়া হয় না

প্রকাশিত: ০৫:৪৮ এএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ কার্যক্রম ১১ মাস ধরে ফাইলবন্দি হয়ে আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। এছাড়া চিকিৎসক, সেবিকাসহ (নার্স) অন্যান্য জনবলও সঙ্কট রয়েছে। এখানে ভর্তি হওয়া রোগীদেরকেও খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

এ কারণে যথাযথ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় তিন লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত লোহাগড়া উপজেলাবাসী। কবে চালু হবে তাও জানে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।  

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার উন্নীতকরণের লক্ষ্যে প্রায় ১০ বছর আগে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তিনতলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ৭ কোটি ১৭ লাখ ৩৪১ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত ভবনটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এরপর ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ স্বাস্থ্য অধিদফতরে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি। ৫০ শয্যার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়নি চিকিৎসক, সেবিকা, শয্যা (বেড), খাবারসহ অন্যান্য বরাদ্দ। এ কারণে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে নবনির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। এদিকে, ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু না হওয়ায় কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসক ও সেবিকারা।

এমনকি ভর্তিকৃত রোগিদের ঠিকমতো খাবারও দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাতে নিরাপত্তারও অভাব রয়েছে। এদিকে, ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে চিকিৎসকের নয়টি পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন চারজন। প্রায় সাতমাস যাবৎ আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য রয়েছে। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

বর্তমানে চারজন চিকিৎসক, দু’জন সেবিকা পরিদর্শক (নার্সিং সুপারভাইজার), নয়জন জেষ্ঠ্য সেবিকা (সিনিয়র নার্স) জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ, অস্ত্রোপচারসহ (অপারেশান থিয়েটার) ভর্তিকৃত রোগিদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সবাই।

প্রতিদিন সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগির চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন তারা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুন নাহার জাগো নিউজকে জানান, এখানে চিকিৎসকদের সহকারীসহ দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। রাতের বেলা নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থার অভাবে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় রাতে নারী চিকিৎসকদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

সহকারী সার্জন ডা. শেখ আবুল হাসনাত জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও আমাকে এখানে (লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স) দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। আমাদের প্রতিদিন সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ রোগী দেখতে হয়। জেষ্ঠ্য সেবিকা বিজলী রানী পাইক জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে ৩১ শয্যার কার্যক্রম চালু থাকলেও প্রায়ই ১শ রোগী ভর্তি হন।

জরুরী বিভাগ ও অস্ত্রোপচারের রোগীসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা নয়জন সেবিকার পক্ষে কঠিন হয়ে যায়। এ কারণে একজন সেবিকাকে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। এখানে ওয়ার্ডবয়সহ পরিচ্ছন্নকর্মী দরকার।

সেবিকা পরিদর্শক রাজিয়া খানম জাগাে নিউজকে বলেন, জনবল সঙ্কট থাকায় একদিকে সেবিকা থাকলে, অন্যদিকে থাকতে পারেন না। রাতে দায়িত্ব পালনের পর আবার তাকে সকালে আসতে হয়। তিনজন সুইপার থাকায় ঈদের সময়ও তাদের ছুটি দিতে পারি না।

চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ইউনুস মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, জনবল সঙ্কট থাকায় আমরা চিকিৎসকদের ঠিকমতো সহযোগিতা করতে পারছি না। ভারপ্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. লুৎফুন নাহার জাগো নিউজকে বলেন, রোগীর খাবার নিয়ে খুব সমস্যা হচ্ছে। কারণ, এখানে ৩১ শয্যার বেশি খাবার বরাদ্দ না দেয়ায় ভর্তিকৃত সব রোগীকে খাবার দিতে পারছি না। এতে খাবার বঞ্চিত রোগীদের প্রতিনিয়ত প্রশ্ন শুনতে হচ্ছে, আমাকে (রোগী) কেন খাবার দেয়া হয় না?

 খাবারের বিষয়টি তাদের বোঝাতে গিয়ে এবং প্রতিদিন রোগীর অনেক চাপ থাকায় চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। সিভিল সার্জন ডা. সুব্রত  কুমার সাহা জাগো নিউজকে বলেন, চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন না দেয়ায় আমরা এটি চালু করতে পারছি না। এতে করে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ থাকছে। তাদের (রোগী) ঠিকমত খাবার ও শয্যা দিতে পারছি না। আমি মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। লিখিতভাবে জানিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে।

হাফিজুল নিলু/এমজেড/এমএস