‘আরেকবার যদি আসছ ঠ্যাং ভাইঙ্গা দিমু কিন্তু’
‘এ দিকে আরেকবার যদি আসছ ঠ্যাং (পা) ভাইঙ্গা (ভেঙে) দিমু কিন্তু’ গত ৩১ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে নৌকা সমর্থকদের প্রতি চড়াও হয়ে এমন হুঁশিয়ারি দেয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. কামরুজ্জামানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
৪০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শুরুতে কামরুজ্জামান নৌকা সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে ‘যাও এখান থেকে’ বলার পরই তার সঙ্গে থাকা বিজিবি সদস্যরা লাঠি নিয়ে তাড়া করেন। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুজন দত্ত।
তিনি সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, নৌকা সমর্থকদের প্রতি চড়াও হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কামরুজ্জামান আমাকে বলেন এটা নাকি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। আমি বেশি কথা বললে আমাকে তিন মাসের সাজা দিয়ে দেবে।
শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনেই নয়, কামরুজ্জামান জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেলের বাসায় গিয়েও চড়াও হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল জানান, ভোট চলাকালে দুপুর ১২টা নাগাদ আমার বাসায় বিজিবির একটি দল নিয়ে চড়াও হন কামরুজ্জামান। আমাকে না পেয়ে বাসার গেটে লাথি মেরে চলে আসেন। এর আগে শহরের ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ কেন্দ্রে রুবেলসহ ছাত্রলীগের সাত-আটজন নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
এসব ঘটনায় সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। তিনি চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের নিকটআত্বীয় বলে জানা গেছে। ভোটের দিন তার এ তৎপরতায় ক্ষুব্ধ জেলা ছাত্রলীগ বিক্ষোভ করে তার অপসারণ দাবি করেছেন।
কামরুজ্জামান ছাড়াও ভোটের দিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন আরও ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এর মধ্যে ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজিবি ও পুলিশের মোট ২৪টি স্ট্রাইকিং ফোর্সের।
ভোট শেষ হওয়ার পরই আওয়ামী লীগ অভিযোগ করে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের মোট ১১৪টি কেন্দ্রের সবকটিতে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে চড়াও হয়েছে প্রশাসনের এসব লোকজন। শুধু তাই নয়, ভোটের আগের রাত থেকে নৌকা প্রতীকের অফিস এবং বাসা-বাড়িতে ঢুকে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর কোনো কারণ ছাড়াই বেপরোয়া আক্রমণ করেন তারা।
নৌকা সমর্থকদের ওপর চড়াও হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘তারা কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। কেউ যদি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, ককটেল বিস্ফোরণ করতে চায় তাহলে তাদেরকে তো সরাতে হবে।’
এদিকে, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান ভোটের আগের রাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে সার্কিট হাউজে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফিরোজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শামীমা আক্তারের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন বলেও খবর ছড়িয়েছে। নির্বাচনে ওই তিনজন প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের অভিযোগ, ওই তিন প্রার্থীকে বিজয়ী করার পরিকল্পনা আগে থেকেই চূড়ান্ত করা হয়েছিল। সার্কিট হাউজে ওই তিন প্রার্থীর সঙ্গে আব্দুল মান্নান বৈঠক করার পর সকলের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। তাছাড়া ভোটের আগের রাত থেকে প্রশাসন সেভাবেই কাজ শুরু করে।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, কালো টাকার বিনিময়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার মিশন বাস্তবায়নে তারা এটি করেছে। আর এর মূলে ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এসে তিন প্রার্থীকে নিয়ে তার বৈঠক এবং প্রশাসনের তাণ্ডবে এ বিষয়টি সবার কাছে এখন পরিষ্কার।
তবে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান তিন প্রার্থীর সঙ্গে কোনো বৈঠক করেননি বলে দাবি করেন এবং নির্বাচনে কারা প্রার্থী হয়েছেন সেটিও তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের জানান।
আজিজুল সঞ্চয়/এমএএস/পিআর