ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্বপ্ন জয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিহীন নাসিমা

শ্রীপুর (গাজীপুর) | প্রকাশিত: ০২:৪২ পিএম, ০১ এপ্রিল ২০১৯

অদম্য মেধাবী দৃষ্টিহীন নাসিমা আক্তার। প্রাথমিক সমাপনী, জুনিয়র সার্টিফিকেট এবং সবশেষ এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪.৬৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।

উচ্চ শিক্ষার আশায় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে থেকে মানবিক বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন সে। এদিন শ্রুতিলেখকের সাহায্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

শ্রীপুর বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী সরকারি কলেজ কেন্দ্র থেকে এবার পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। কেন্দ্রটির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, প্রথম দিন নাসিমা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। সে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে শ্রুতিলেখকের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনা আকতার বলেন, নাসিমা নারীদের এগিয়ে যাওয়ার একটি উদাহরণ। সে একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাঠদানে অংশ নিয়েছে। যদিও তার জন্য আলাদা শিক্ষা পদ্ধতি ছিল। তার অদম্য ইচ্ছার কারণে সে লেখাপড়ায় এগিয়ে যাচ্ছে।

২০০৪ সালে বাবা বারেক মিয়া ও মা ফিরোজা বেগম এলাকার কিছু লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে মেয়ের দৃষ্টি ফেরানোর আশায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কেল্লার মাজারের বার্ষিক ওরসে নিয়ে যান নাসিমা আক্তারকে। ভালো গান গাইতে পারে জেনে সেখানে উপস্থিত কিছু লোকের অনুরোধে গান ধরে শিশু নাসিমা, গানের সুর শুনে উপস্থিত মানুষের ছোট্ট একটি জটলা তৈরি হয়।

এদের মধ্যে থেকে এগিয়ে আসেন মঞ্জু সমাদ্দার নামে এক ভদ্রলোক। দৃষ্টিহীন নাসিমার প্রতিভা ধরা দেয় তার কাছে। নাসিমাকে পড়ালেখা করানোর জন্য ঢাকার একটি মিশনারিজ স্কুলে ভর্তি করার প্রস্তাব দেন বাবা বারেক মিয়াকে। প্রস্তাবে অবাক হন বারেক মিয়া। দৃষ্টিহীনরা কি পড়তে পারে! বাড়িতে এসে সংসারের অভাব ও অভাবের কথা চিন্তা করে দৃষ্টিহীন নাসিমাকে তুলে দেন মঞ্জু সমাদ্দারের হাতে। তাকে ঢাকার একটি মিশনারিজ স্কুলে ভর্তি করান। শুরু হয় নাসিমার আলোকিত জীবনের নতুন এক অধ্যায়।

নাসিমাদের বাড়ি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিংদীঘি গ্রামে। তারা এক ভাই ও দুই বোন। বাবা একসময় কাঁচামাল বিক্রির ব্যবসা করলেও এখন আর কাজ করতে পারেন না। অনেক কষ্ট করে সন্তানদের লেখা করাচ্ছেন। নাসিমার ভর্তির পর তাকে কলেজের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন শিক্ষকসহ কলেজ কর্তৃপক্ষ। সহপাঠীরা নাসিমাকে বাড়ি থেকে কলেজে আনা নেয়ায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করত।

ছোটবেলা থেকে দৃষ্টিহীনদের সঙ্গে ব্রেইল পদ্ধতি ও শ্রুতিলেখকের মাধ্যমে পড়াশোনা করলেও এখন উচ্চ মাধ্যমিকে এসে নতুন অভিজ্ঞতায় পড়েছে নাসিমা। এখানে শুধু নাসিমা একাই দৃষ্টিহীন। শ্রেণিকক্ষের বাইরে দৃষ্টিহীনদের পড়াশোনার মাধ্যম রিডারের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকটা প্রতিবন্ধকতায় রয়েছে নাসিমা। তবে নাসিমার ধারণা, সে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে সাফল্যের শিখরে পৌঁছবে।

নাসিমা লেখাপড়া করে আইনজীবী পেশাকে বেছে নিতে চায়। এলাকার অসহায় মানুষ যারা আইনের সহযোগিতা থেকে দূরে তাদের পক্ষে দাঁড়িয়ে একজন দৃষ্টিহীন হিসেবে এ পেশাকে জয় করতে চায় সে।

jagonews

নাসিমার বাবা বারেক মিয়া বলেন, দৃষ্টিহীন হয়েই জন্মগ্রহণ করে নাসিমা। পরে সংসারে অভাবের কারণে ভালো চিকিৎসা করাতে পারেননি। তবে নাসিমা ছোটবেলা থেকেই খুবই মেধাবী। একটি বিষয় একবার শুনলেই সে স্মরণ রাখতে পারে। আগে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে নাসিমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও এখন তাকে নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছি।

পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আহমেদুল কবির বলেন, নাসিমা খুবই মেধাবী, পড়াশোনার প্রতি তার প্রচুর আগ্রহ। একবার একটি বিষয় শুনলেই তা ধারণ করে নিজের স্মৃতিশক্তিতে। স্মৃতি ধরে রাখার শক্তিও প্রখর।

পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবুল খায়ের বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী নাসিমাকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। শিক্ষাবোর্ডের অনুমতি সাপেক্ষে তাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি সে ভালো ফলাফল করবে।

শিহাব খান/এফএ/আরআইপি

আরও পড়ুন