আ.লীগ নেতার বিপক্ষে যাওয়ায় গরু চুরি
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ (নৌকা) ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী আলতাফ হোসেন হাওলাদারের (মোটরসাইকেল) নেতাকর্মীরা এখন দুই ভাগে বিভক্ত।
নির্বাচনের জের ধরে ইতোমধ্যে সমর্থকের গরু লুট, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনীতি।
মামুনুর রশিদ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, আলতাফ হাওলাদার উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।
এদিকে, যেকোনো সময় বিজয়ী প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গত বুধবার থানা পুলিশের ওসি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান মনোনয়ন দেয়া হয় মামুনুর রশিদকে। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র ভোট করেন আলতাফ হাওলাদার। এজন্য ১৫ মার্চ আলতাফ হাওলাদারের উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। সেখানে ওসমান খানকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই ওই ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে সংঘাতে জড়াচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ওই ইউনিয়নের খাসেরহাটে বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে আলতাফ হাওলাদারের অনুসারী জেলা মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোস্তফা বেপারী, আওয়ামী লীগ কর্মী আবু সুফিয়ান ও মনোয়ার হোসেনকে মারধর করা হয়। মামুনুর রশিদের অনুসারীরা এ হামলা চালিয়েছে বলে আহতদের অভিযোগ। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওই রাতেই নির্বাচনকে ঘিরে নতুনভাবে গড়ে ওঠা খাসেরহাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ের চেয়ার- টেবিল ভাঙচুর করা হয়। হামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ওসমান খান বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা মোখলেছুর রহমান পান্নুসহ ৬৫ নেতাকর্মীর নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
আলতাফ হাওলাদারের কর্মী চর ইন্দরিয়া গ্রামের সবুজ মাঝি বলেন, মোটরসাইকেল মার্কার নির্বাচন করায় মামুনুর রশিদের লোকজন আমাকে একাধিকবার হুমকি দিয়েছে। ২৪ মার্চ ভোটের রাতে মামুনুর রশিদের অনুসারীরা আমাকে বাড়িতে খুঁজে না পেয়ে একটি গরু নিয়ে যায়। পরে গরুটি পাশের সয়াবিন ক্ষেতে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেয় তারা।
মামুনুর রশিদের অনুসারী উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ওসমান খান বলেন, আমরা রাতে মসজিদে নামাজ পড়তে যাই। এসে দেখি আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙা। কারা, কী কারণে কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে তা নিশ্চিতভাবে জানাতে পারেননি তিনি। তবে মোস্তফাসহ অন্যদেরকে লেনদেন ঘটনায় মারধর করা হয়েছে বলে এই আওয়ামী লীগ নেতার দাবি।
আলতাফ হোসেন হাওলাদারের অনুসারী যুবলীগ নেতা আনোয়ার গাজী বলেন, নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করায় মামুনুর রশিদের লোকজন গরু লুট, নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে অফিস ভাঙচুর করে নাটক সাজিয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে।
রায়পুর থানা পুলিশের ওসি একেএম আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুরের বিষয়ে দুই ধরনের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করতে হাজীমারা পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
কাজল কায়েস/এএম/এমকেএইচ