পাঁচ মাসেও দেশে আসেনি গৃহকর্মী আকলিমার লাশ
ভোলা সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নের পাঙ্গালিয়া গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে আকলিমা বেগম (২২)। ৭-৮ বছর আগে আবু সাঈদ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী আবু সাঈদ বিভিন্ন করণে তার ওপর নির্যাতন চালাতেন। স্বামীর কোনো আয়-রোজগার না থাকায় অনেক সময় না খেয়ে দিন কাটাতে হতো আকলিমাকে। এসব কারণে বিয়ের মাত্র ছয় মাস পর তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় তার সংসার ভেঙে যায়।
এরপর থেকে আকলিমার আশ্রয় হয় বাবার সংসারে। বাবার সংসারেও ছিল অভাব-অনটন। বড় ভাই বিল্লাল হোসেন গ্রামে রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ করতেন। বাবা পঙ্গু। এক ভাই ও চার বোনের মধ্যে আকলিমা বড়। কিছুদিন পর আকলিমার কোল জুড়ে আসে ছেলে সন্তান। তারপর সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন তিনি। ২০১৬ সালে আকলিমা বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোট তিন বোন ও ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে চলে যান। সেখানে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন।
এরপর ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকার এমএস আল জাহান ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরবে যান আকলিমা। সৌদি আরবের জিজানস্থ আহাদ আল-মাসারেহা শহরের একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে প্রতি মাসে গ্রামের বাড়িতে বাবার কাছে টাকা পাঠাতেন তিনি। কিন্তু সৌদি আরবে যাওয়ার মাত্র ১১ মাস পর হঠাৎ ২০১৮ সালের ২২ অক্টোবর তার মৃত্যু হয়। আকলিমা আত্মহত্যা করেছে বলে তার পরিবারকে জানানো হয়।
আকলিমার বাবা শাহ আলম বলেন, মেয়ে সৌদি আরব যেতে চাইলে আমি প্রথমে রাজি হয়নি। পরে দেখলাম ওর সঙ্গে অনেকে সৌদি গিয়ে রোজগার করছে। তারপর রাজি হই। অনেক কষ্টে মানুষের কাছ থেকে সুদে টাকা ধার ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আকলিমাকে সৌদি পাঠাই। সেখানে আকলিমা ভালোভাবে কাজ করেছে। কখন কোনো বিষয় সে আমাদের কাছে লুকাতো না। প্রতিমাসে টাকা পাঠাতো। আমাদের সঙ্গে যখনি কথা বলতো তখনি হেসে কথা বলতো। বলতো ভালো আছি। কোনো চিন্তা করো না।
তিনি আরও বলেন, হঠাৎ করে আমার মেয়ে কেন অত্মহত্যা করবে? এটা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার মেয়ের মৃত্যু রহস্যজনক। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করছি।
আকলিমার ভাবি হনুফা বেগম বলেন, আমার বিয়ের পর আকলিমা ও আরও তিন ননদ ছোট ছিলো। আমার চোখের সামনে দিয়ে বড় হয়েছে তারা। সংসারে অনেক অভাব ছিল। আমার কাছে আকলিমা সব কথা বলতো। বিদেশ গিয়েও সব বলেছে। সৌদি আরবে কাজ করা অবস্থায় কোনো সমস্যা হয়নি আকলিমার। সে অত্মহত্যা করেছে এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আকলিমার সঙ্গে নিশ্চিত কোনো খারাপ কিছু হয়েছে। তার মৃত্যু হয়েছে প্রায় পাঁচ মাস কিন্তু এখনো তার মরদেহ দেশে আসেনি।
আকলিমার বড় ভাই মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, আমার বোনের মৃত্যুর পরের দিন আমরা খবর পাই সে আত্মহত্যা করেছে। আমরা বিশ্বাস করেনি। তারপর আমি ও আমার বাবা ঢাকার এজেন্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সত্যিই তার মৃত্যু হয়েছে। বোনের মৃত্যুর পাঁচ মাস হয়ে গেছে আজও তার মরদেহ আমরা দেশে আনতে পারিনি। মরদেহ দেশে আনার জন্য ঢাকার কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এবং আকলিমার এজেন্ট অফিসে একের পর এক কাগজপত্র জমা দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মরদেহ এখনো পাচ্ছি না।
ভোলা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক এম ডি কাইয়ুম খান বলেন, বিদেশে কেউ মারা গেলে তার মরদেহ বাংলাদেশে আনতে অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এতে একটু সময় লাগে। তবে আকলিমার মরদেহ দ্রুত দেশে আনতে তারা সৌদি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন।
জুয়েল সাহা বিকাশ/আরএআর/পিআর