মা আমাকে বাঁচাও
রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে ২২তলা ভবনের আগুন লাগার পরপরই ফাহাদ ইবনে কবির নামে এক যুবক তার মা ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে ফোন দেন।
ফাহাদ ইবনে কবির তার মা ফরিদা ইয়াসমিনকে মোবাইলে জানান, ভবনের ভেতরে আগুনের ধোঁয়ায় আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে মা। আমি দম নিতে পারছি না। আমাকে বাঁচাও মা।
ছেলের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার পরপরই মা ফরিদা ইয়াসমিন ছেলের সন্ধানে চলে আসেন বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের ২২তলা এফ আর ভবনের নিচে। সেখানে ছেলের সন্ধানে আর্তনাদ শুরু করেন তিনি।
জানা যায়, ফাহাদ ইবনে কবিরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নে। দুই ভাইয়ের মধ্যে ফাহাদ ছোট। ফরিদা ইয়াসমিন ঢাকায় ছেলের সঙ্গে থাকেন। তার ছেলে ওই ভবনের ১২ তলায় ডাট গ্রুপে কাজ করেন। সেখানকার আইটি ইঞ্জিনিয়ার তার ছেলে। এফ আর ভবনের নিচে অবস্থান নিলেও এখনো সন্তানের খোঁজ পাননি মা ফরিদা ইয়াসমিন।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এফ আর ভবনে আগুন লাগার পর আমার ছেলের সঙ্গে এক ঘণ্টা আগে কথা হয়েছে। মোবাইলে ফাহাদ আমাকে বলেছে মা আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, আমাকে বাঁচাও। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি এখানে ছুটে আসি। এখন ফাহাদের মোবাইল নম্বর বন্ধ পাচ্ছি। এখনো তার সন্ধান পাইনি। আমি পাগলের মতো তাকে খুঁজছি। জানি না ছেলের ভাগ্যে কি ঘটেছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে এফ আর টাওয়ারের ৯তলা থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। পরে এ আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
আগুন লাগার পর ২২তলা ভবনটিকে আটকা পড়েছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে কেউ কেউ লাফিয়ে পড়ে প্রাণে বাঁচার চেষ্টা করছেন। আহতদের গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুন ভবনে ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কিত লোকজন জানালা দিয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। তাদের অনেককেই চিৎকার করতে শোনা গেছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এ অগ্নিকাণ্ডে সাতজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তারা হলেন- পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), আমেনা ইয়াসমিন (৪০), মামুন (৩৬), শ্রীলঙ্কার নাগরিক নিরস চন্দ্র, আবদুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মাকসুদুর (৬৬) ও মনির (৫০)।
এদিকে, আগুন নিয়ন্ত্রণের আসার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস সদরের ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, বহুতল ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ২২টি ইউনিট দীর্ঘক্ষণ কাজ করার পর বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলো।
কাজল কায়েস/এএম/এমকেএইচ