পাবনায় ট্রিপল মার্ডার : গ্রেফতার ৬
পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজায় ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে ৩ গরু ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার মামলায় ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। রোববার ভোরে তাদের গ্রেফতার করেছে সাঁথিয়া থানা পুলিশ।
গ্রেফতাররা হলেন, সাঁথিয়া উপজেলার করমজা সরদার পাড়ার কালু সরদারের ছেলে খোকন (৩২), আনছার মোল্লার ছেলে আহসান হাবিব (৩২), দত্তকান্দি গ্রামের রাজু প্রামানিকের ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক (১৬), করমজা নিশিপাড়া গ্রামের অঞ্জন দাসের ছেলে সুজন দাস (১৮), নয়ন দাসের ছেলে বিষ্ণু দাস (২০), খিতীশ চন্দ্র দাসের ছেলে লিটন দাস (২০)।
সাঁথিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আলিম জাগো নিউজকে জানান, রোববার ভোরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ওই ছয় আসামিকে গ্রেফতার করে।
সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, গ্রেফতারদের রোববার দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়।
গত ২৫ আগস্ট দুপুরে ছেলে ধরা গুজবে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা হাটে তিন জনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলেন, নাটোর সদর উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামের সাবেক মেম্বর আলাউদ্দিন (৫০), দিনাজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম শিবরামপুর গ্রামের আসলাম (৫০) ও পাবনা সদর উপজেলার গাছপাড়া গ্রামের আবু বক্কার (৫২)।
পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত ওই তিন ব্যক্তিই গরু ব্যবসায়ী। এ ব্যাপারে পরদিন নাটোর জেলার সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের নিহত আলাউদ্দিন ওরেফ আলাল মেম্বরের ছোট ভাই রানা শেখ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে অজ্ঞাতনামা তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়।
নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে যে, গরু ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে অপহরণের নাটক সাজিয়ে পরিকল্পিতভাবে ওই তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ ও সরেজমিনে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২৫ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক ১১টার দিকে নগরবাড়ী থেকে ছেড়ে আসা বগুড়াগামী অলিফ পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাহী গাড়ি বগুড়া-নগরবাড়ী মহাসড়কের সাঁথিয়া উপজেলাধীন করমজা চতুর হাট নামক স্থানে এলে ওই গাড়িতে থাকা কতিপয় ব্যক্তি ঘটনার শিকার তিন গরু ব্যবসায়ীকে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে প্রতিভা বিপণন কেন্দ্রের সামনে নিয়ে পেটাতে থাকেন এবং তাদেরকে অপহরণকারী বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাদের চিৎকারে হাটের লোকজন উৎসাহী হয়ে ওই তিন ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেন। এক পর্যায়ে ওই তিন গরু ব্যবসায়ী ঘটনাস্থলে মারা যান।
করমজা চতুর হাটের কাঠ ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক জাগো নিউজকে জানান, কতিপয় ব্যক্তি ওই তিনজনকে শার্টের কলার চেপে ধরে ঘটনাস্থলে এনে অপহরণকারী বলে পেটাতে থাকেন। ঘটনাস্থলের সামনে প্রতিভা বিপণনের মালিক রাজন (৩৫) জানান, তার দোকানের সামনে তিন ব্যাক্তিকে আমজনতার পেটানো দেখে দোকান বন্ধ করে চলে যাই।
প্রত্যক্ষদর্শী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক ব্যক্তি জানান, অলিফ পরিবহন থেকে ওই তিনজনকে জোরপূর্বক নামিয়ে হাটের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে সাঁথিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন।
পাবনার পুলিশ সুপার আলমগীর কবির ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, ছেলে ধরা সন্দেহে তাদের পিটিয়ে হত্যা করা হলেও এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। যা অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে। সাঁথিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ মাহমুদ খান জাগো নিউজকে জানান, পুলিশ হত্যার রহস্য উদঘাটনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
একে জামান/এমজেড/আরআইপি