এক ফ্লাইওভারে বদলে গেল রূপগঞ্জের চিত্র
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগস্থল রূপগঞ্জের ভুলতা। হাজারো যাত্রীবাহী বাস, মালবাহী ট্রাক ও লরির নিত্যচলাচল এই পথে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের একমাত্র রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয় এই মহাসড়ক। দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের মার্কেট গাউছিয়ার অবস্থান থাকায় নিত্যদিনের যানজটের এলাকা হিসেবে চিহ্নিত এটি।
ফলে এই এলাকার যানজট নিরসন, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড গতিশীল এবং সিলেট ও চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মেগা প্রকল্পের অধীনে ভুলতা ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ হাতে নেয় সরকার।
চারলেন বিশিষ্ট তিনতলা ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে প্রায়ই শেষ হয়েছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ায় বদলে গেল রূপগঞ্জের চিত্র। আগামী ১৬ মার্চ ভুলতা ফ্লাইওভারের গাজীপুর-মদনপুর সড়কের একটি লেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে নিত্যদিনের যানজটের এলাকাখ্যাত রূপগঞ্জের যানজট মুক্ত হয়ে যাবে। গতি আসবে নগর জীবনের।
বৃহস্পতিবার সকালে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মমতাজ বেগম ভুলতা ফ্লাইওভার পরিদর্শন শেষে বলেন, ভুলতা ফ্লাইওভারের গাজীপুর-মদনপুর সড়কের একটি লেন আগামী ১৬ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে খুলে দেয়া হবে ভুলতা ফ্লাইওভার।
স্থানীয়রা জানান, ভুলতা এলাকায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তহম পাইকারি কাপড়ের বাজার গাউছিয়া মার্কেট। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ের সংযোগস্থল হওয়ায় এখানে যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। ভুলতা ফ্লাইওভারের একপাশ উদ্বোধন শেষে খুলে দেয়া হলে যানজট নিরসন হয়ে যাবে। এতে করে সারা দেশের যাতায়াত ব্যবস্থার গতিশীলতা বাড়বে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা এলাকায় যানজট নিত্যদিনের সঙ্গী। একঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগে তিনঘণ্টা। ভুলতা ফ্লাইওভারের কাঞ্চন-মদনপুর লেনের উদ্বোধন হলে যানজট থাকবে না। মুক্তি পাবে এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারীরা। ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন হলে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল থেকে ঢাকা হয়ে ময়মনসিংহ বিভাগসহ উত্তর পশ্চিমাঞ্চল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা জনগণের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন দ্রুত, সহজ এবং নিরাপদ হবে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ২৪০ কোটি ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২০৮ টাকা ব্যয়ে ভুলতা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজ শুরু করে সরকার। সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল গত বছরের জুন পর্যন্ত। ফ্লাইওভারটির নির্মাণে প্রথমে হকারদের কারণে বেগ পেতে হয় নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে গত বছরের ৮ আগস্ট ফ্লাইওভারটি নির্মাণে আরও ৫৮ কোটি ৫১ লাখ ২০ হাজার ৪৮৬ টাকা বাড়ায় সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
চারলেন বিশিষ্ট তিনতলা ফ্লাইওভারটি ১.২৩৮ কিলোমিটার লম্বা হবে। যার উভয় গার্ডার অভ্যন্তরে চারলেন বিশিষ্ট। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ হচ্ছে রূপগঞ্জের ভুলতা ও গোলাকান্দাইলে। ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করছে চায়না রেলওয়ে ২৪ ব্যুরো গ্রুপ, স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড ও এমএন বিল্ডার্স লিমিটেড।
ঠিকাদারি সংস্থা সূত্র জানায়, ভুলতা ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ ৯০ শতাংশের বেশি শেষ হয়েছে। গাজীপুর-মদনপুর সড়কের একটি লেন এবং কাঞ্চন-মদনপুর সড়কের ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। অল্প কিছু কাজ বাকি আছে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বলেছেন বলেছেন, চারলেন বিশিষ্ট তিনতলা ভুলতা ফ্লাইওভারের এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) গাজীপুর-মদনপুর সড়কের পুরো কাজ সম্পন্ন হয়েছে। পুরো ফ্লাইওভারের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। পর্যায়ক্রমে ফ্লাইওভারটি খুলে দেয়া হবে।
মীর আব্দুল আলীম/এএম/এমকেএইচ