কিডনি রোগী ছেলের ওষুধের জন্য ঢাকায় রিকশা চালান বাবা
শরীরের ফুলাগুলো আগের থেকে অনেকটা কমেছে সাকিবের। তবে এখনও প্রস্রাবের সমস্যা রয়েছে তার। চিকিৎসক বলেছেন, আগের চেয়ে সাকিবের কিডনি বর্তমানে ৩০ ভাগ ভালো অবস্থানে আছে। এখন সে অনেকটাই ভালো। ডায়ালাইসিস ছাড়া শুধু ওষুধ খেয়েই ভালোর পথে সে। তবে প্রতিদিন সাকিবকে আড়াইশ টাকার ওষুধ খেতে হচ্ছে। সে দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ফজলে এলাহীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছে।
সাকিবের বয়স সাড়ে ১৩ বছর। সে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া গ্রামের সামছুল হকের ছেলে। উপজেলার ঝাড়গাঁও দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বাবা সামছুল হক ছেলের চিকিৎসার টাকা জোগাতে তিন মাস ধরে ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। মা শরিফা বেগম বাড়িতে সাবিক ও ছোট ছেলে সাজিদকে নিয়ে।
সাকিবের আগের সংবাদটি পড়তে ক্লিক করুন
শরিফা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, সাত মাস আগে সাকিব যখন অসুস্থ হলে প্রথমে তাকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানকার চিকিৎসক সাকিবকে দেখেই দিনাজপুর আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। দিনাজপুরে সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান তার দুটি কিডনিই নষ্ট হওয়ার পথে। তার চিকিৎসা করতে অনেক টাকা দরকার। এ খবর শোনার পর এলাকার লোকজন হাট-বাজার থেকে প্রায় ৭০ হাজার টাকা সহযোগিতা তোলেন। বাড়িতে একটি গরু ছিল সেটি বিক্রি করা হয় ১০ হাজার টাকায়। প্রতিবেশীরা প্রায় ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। এগুলো ধাপে ধাপে পাওয়া গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে সাকিবের চিকিৎসায়।
তিনি জানান, আড়াই শতক জমির ওপর বাড়ি তাদের। এছাড়া কিছুই নেই। তার স্বামী এলাকায় ভ্যান চালিয়ে একটা গরুর বাছুর কিনেছিলেন। সেই বাছুরও বিক্রি করে দেয়া হয়েছে সাবিকের চিকিৎসা করাতে। অভাবের কারণে দুই সন্তানকে তাদের বাবার কাছে রেখে তিনি ঢাকায় কিছুদিন পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সন্তানের টানে কিছুদিন পরই আবার চলেও আসেন। তিন মাস হলো তার স্বামী ঢাকায় আসেন রিকশা চালাতে। ঢাকা থেকে প্রতিদিন ছেলের ওষুধ ও সংসার চালানোর জন্য ৩শ টাকা বাড়ি পাঠান। সেই টাকা দিয়েই চিকিৎসা চলছে সাকিবের। সেখান থেকে এনজিও ঋণও শোধ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দিনাজপুরের চিকিৎসক জানিয়েছেন, এভাবে দীর্ঘদিন চিকিৎসা চালাতে হবে সাকিবের। ১৯ জানুয়ারি তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়েছিলাম। আবার ১৯ মার্চ নিয়ে যেতে হবে। একবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া আসা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ হয়। সেই টাকা জোগাড় করতে হয় দুই মাস ধরে। তবে এলাকার লোকজনও মাঝে মাঝে সহযোগিতা করে। যে যার সাধ্যমতো টাকা দেন। সবার সহযোগিতায় আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে উঠছে সাকিব।
কথা হয় সাকিবের চাচাতো ভাই শামীম ইসলামের সঙ্গে। তিনি এলাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। সাকিবের স্থানীয় অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
শামীম জানান, সাকিবের পরিবারটি খুবই গরিব। খুব কষ্টে চলে তাদের সংসার। এলাকার লোকজন সাকিবের চিকিৎসায় সহযোগিতা না করলে হয়তো বাড়ির জমিটুকু বিক্রি করে দিতে হতো। প্রতি মাসে প্রায় ৮ হাজার টাকার ওষুধ লাগে। এভাবে কতদিন চিকিৎসা চলবে আল্লাহ জানেন। তার বাবা ঢাকা থেকে বাড়ি এলেই চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ চিকিৎসক বলেছেন, যেন একদিনেরও ওষুধ বন্ধ না থাকে সাকিবের।
তিনি জানান, কারও পরিবারে একজন কিডনি রোগী থাকলে সেই পরিবারটি শেষ হয়ে যায়। অনেক ব্যয়বহুল রোগ এটি। গরিব মানুষের হলে ভিক্ষা করা ছাড়া কিছুই থাকে না।
সাকিব জানায়, আগের থেকে তার শরীরের অবস্থা অনেকটা ভালো। এখন নিয়মিত স্কুলে যায়। তার যখন কিডনি সমস্যা দেখা দেয় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অনেকেই তাকে সহযোগিতা করেন। সবার দোয়া চেয়েছে সাকিব।
এমএএস/পিআর