অটোরিকশা চালিয়ে প্রতিদিন হাজার টাকা আয় রাণীর
২২ বছর আগে ৭/৮ বছর বয়সে তাহিনপুর উপজেলা থেকে সুনামগঞ্জ শহরে আসেন যাত্রী রাণী দত্ত (৩২) । অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসলেও তিনি চার দেয়ালে আবদ্ধ হয়ে যান। মায়ের সঙ্গে তিনিও মানুষের বাসার কাজ শুরু করেন। তখন ১০০ টাকা বেতনেও তাকে কেউ কাজ দেয়নি। অভাবের তাড়নায় অনেক কিছুই সইতে হয়েছে তাকে। কিন্তু তিনি তার স্বপ্ন চার দেয়ালে আটকে থাকতে দেননি।
যাত্রী রাণী দত্ত প্রথমে নিজ উদ্যোগে সেলাইয়ের কাজ শেখেন। এরপর টেইলার্সে কাজ শুরু করেন। টেইলার্সে কাজের টাকা দিয়ে ছোট বোনকেও বিয়ে দেন। এরই মধ্যে হৃদয় দত্ত নামে একজনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপর তার সঙ্গে ভালোবাসা, ভালোবাসা থেকে বিয়ে। তবে সেই ভালোবাসার বিয়ে মেনে নেয়নি হৃদয় দত্তের পরিবার। বিয়ের ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও যাত্রী রাণী দত্ত পাননি শ্বশুর-শাশুড়ির ভালোবাসা।
নাতি-নাতনির মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না তারা। কিন্তু স্বামীর ঘরেও সুখ হয়নি তার। বিয়ের এক মাস কাটতে না কাটতে স্বামী হৃদয় দত্ত তাকে মারধর করেন। তাকে রোজ মারধর করতেন। এমনও হয়েছে কয়েকদিন হৃদয় বাসায় আসতেন না, খারাপ মেয়েদের সঙ্গে থাকতেন। এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করলেই তাকে নির্যাতন করেছেন। যখন বড় ছেলের জন্ম হয়েছে তখন পাশে পাননি স্বামীকে। একাই হাসপাতালে গিয়েছেন, সেখানে বাচ্চা প্রসবের পর একাই বাসায় এসেছেন। এখন তিন সন্তানের মা যাত্রী রাণী দত্ত। তাদের এক ছেলে দুই মেয়ে। সংসারের সব খরচ তার স্বামীই চালাতেন। তবে তিনি নিয়মিত কাজ করেন না।
কিছুদিন আগে যাত্রী রাণী সিদ্ধান্ত নেন আবার কিছু একটা করবেন। তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সে কারণেই তিনি স্বামীর কাছ থেকে অটোরিকশা চালানো শিখেছেন। গত ৭ মার্চ তিনি অটোরিকশা নিয়ে প্রথমবার শহরে বের হন ।
যাত্রী রানী দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ছোট বেলা থেকে কিছু একটা করার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু অভাবের সংসারে তা যেনো হয়ে উঠছিল না। কিন্তু এখন স্বাবলম্বী নারী হয়ে কাজ করতে চাই। অটোরিকশা চালিয়েই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি আরও বলেন, যখন আমি প্রথম অটোরিকশা হাতে নেই, অনেক ভয় হয়েছিল। কিন্তু হেরে যাইনি। প্রথমে দুই একদিন হাত কাঁপলেও এখন আর হাত কাঁপে না। ৭ মার্চ আমাকে মহিলা পরিষদে ডাকা হয়। নারী দিবসের শোভাযাত্রায় অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানায় তারা। আমিও খুব শখ করেই শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করি।
আয়ের বিষয়ে যাত্রী রানী দত্ত বলেন, আমি মাত্র অটোরিকশা চালানো শুরু করেছি। দৈনিক ১০০০-১১০০ টাকা আয় হয়। অটোরিকশাটি কিস্তিতে কিনেছি। প্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চাই নিজের একটি বাড়ি, থাকার মতো একটি জায়গা আর আমার ছেলে-মেয়েদের মানুষের মতো করে গড়ে তুলতে। কারণ আমি চাই না আমার মতো পরিণতি কারো হোক। আমার ছেলে-মেয়ে পড়াশুনা করে মানুষের মতো মানুষ হবে সেটাই আমি চাই।
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমকেএইচ