ভিডিও EN
  1. Home/
  2. দেশজুড়ে

স্বর্ণ চোরাচালান : ভিন্ন বক্তব্য জেলা ও গোয়েন্দা পুলিশের

আবু আজাদ | চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ০৩:২৭ পিএম, ১০ মার্চ ২০১৯

চট্টগ্রামে ৭০০ পিস স্বর্ণবার উদ্ধারের পৃথক দুটি মামলায় আসামিদের চার দফা রিমান্ডেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। দুই ঘণ্টার ব্যবধানে একই কায়দার দুটি স্বর্ণ চোরাচালান রুখে দেয়ার পর মামলা দুটির তদন্তে থাকা পুলিশের আলাদা দুটি শাখা বলছে ভিন্ন ভিন্ন কথা।

গত ৩ মার্চ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জে একটি জিপ গাড়িতে তল্লাশি করে ৬০০ পিস স্বর্ণবার উদ্ধারের ঘটনায় জোরাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। প্রথম দফায় পাঁচদিনের রিমান্ডের পর আসামিদের আবারও চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সে রিমান্ডেরও আজ দ্বিতীয় দিন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই মুখ খুলছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আসামিরা নিজেদের বারবার স্বর্ণপাচারের ক্যারিয়ার দাবি করছে। বলছে তাদের কাজ পৌঁছে দেয়া, বাকিদের তারা চেনেন না। কিন্তু আমরা তাদের অতীত ইতিহাস ঘেঁটে ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে যে বিষয়টি জেনেছি তা হলো- এরাই মূল কারবারি।’

‘গ্রেফতার করিম ও রাকিবের বাড়ি চুয়াডাঙ্গার দর্শনায়। সে হিসেবে তাদের বাড়ির পাশেই ভারত সীমান্ত। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, করিম নিজেই স্বর্ণ চোরাচালান দলের সক্রিয় সদস্য। উদ্ধার হওয়া ৬০০ স্বর্ণবার চুয়াডাঙ্গা দিয়ে ভারতে পাচারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার আরেক ভাই চোরাচালান মামলার পলাতক আসামি। এর আগে করিমের বিরুদ্ধেও স্থানীয় দামুরহুদা থানায় চোরাচালানের দায়ে একটি মামলা আছে,’-যোগ করেন ওসি ইফতেখার হাসান।

এদিকে নগরের সিআরবি এলাকা থেকে একই দিন ১০০ পিস স্বর্ণবারসহ দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের বিষয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (বন্দর) এস এম মোস্তাইন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আসামিদের প্রথম দফায় চারদিন রিমান্ডের পর আরও দুই দিনের রিমান্ড গতকাল শেষ হয়েছে। পুলিশ সব রকমের চেষ্টা করেছে। কিন্তু আশানুরূপ কোনো ফলাফল আসেনি। আসামিরা নিজেদের বিষয়ে সব তথ্য দিলেও অপর কারো বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলছে না। বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকজনের নাম বলেছে, তা আমরা যাচাই করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওই দিন দুই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে মো. বিলাল হোসেন (২৮) আসলেই গাড়িচালক। স্বর্ণ পাচারের কাজটি করছিল লাভু শাহা ওরফে প্রলয় কুমার শাহা (৫৯)। প্রথমে নিজেকে লবন ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিলেও রিমান্ডে স্বীকার করেছেন তিনি একজন ক্যারিয়ার বা বহনকারী। তার কাজ স্বর্ণ পৌঁছে দেয়া। কিন্তু এর বাইরে সে কার কাছ থেকে স্বর্ণবারগুলো সংগ্রহ করেছে বা কার কাছে পৌঁছাতো তার কিছুই বলতে পারছেন না।’

তবে পুলিশী রিমান্ডে কোনো তথ্য না মেলার বিষয়ে ভয়ঙ্কর কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা। তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া আসামিদের কাছ থেকে খুব সহজে কথা বের করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন সময় আমরা জঙ্গিদের ইন্টারগেশনে নিয়ে গেলে তারা কথা বলে না, কোনো তথ্য দেয় না। একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে স্বর্ণপাচারের জড়িত আসামিদের ক্ষেত্রেও। স্বর্ণ চোরাচালানকারীরাও খুব শক্ত প্রকৃতির। বারবার জিজ্ঞাসাবাদে শুধু নিজেদের বিষয়ে ছাড়া আর কিছুই জানাচ্ছে না তারা।’

এর আগে গত সোমবার (৪ মার্চ) চট্টগ্রাম আদালতে পৃথক দুটি শুনানিতে মিরসরাই থেকে আটক রাকিব ও করিমের বিরুদ্ধে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। ওই রিমান্ড শেষে গত শুক্রবার (৮ মার্চ) আবারও চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। এছাড়া সিআরবি থেকে গ্রেফতার বিলাল হোসেন ও লাভু শাহার বিরুদ্ধে প্রথম দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। পরে বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) আরও দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। রিমান্ড শেষে আজ তাদের আদালতে তোলার কথা রয়েছে। তবে এর পরে আসামিদের আর রিমান্ডে নেয়ার আবেদন হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রসঙ্গত, গত ৩ মার্চ (রোববার) বেলা ১১টার দিকে নগরীর কোতোয়ালী থানার সিআরবি সাতরাস্তার মোড় এলাকায় প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে ১০০ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় এলাকায় অপর একটি জিপ গাড়িতে তল্লাশি করে প্রায় ২৭ কোটি টাকা মূল্যের ৬০০টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নগরের পতেঙ্গা থানায় স্বর্ণ চোরাচালানের ঘটনায় গোয়েন্দা অধিদফতরের পক্ষ থেকে ৬৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার অধিকাংশেরই চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। কিন্তু তদন্ত সোনা উদ্ধারেই শেষ হয়েছে। কিছু আসামির যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডও হয়েছে। যাদের অধিকাংশ তথাকথিত ক্যারিয়ার বা বহনকারী। কারা এ স্বর্ণ দেশে আনছে? কারাই বা পাচার করছে? মূল হোতাই বা কে? এসব প্রশ্নের কোনো জবাব নেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে!

চট্টগ্রামে স্বর্ণ পাচারে সবচেয়ে আলোচিত ও সফল ঘটনা ছিল ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি। ওই দিন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেট থেকে সিন্দুক ভর্তি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়। সে ঘটনায় আন্তঃদেশীয় চোরাচালানকারী আবু আহম্মদকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও তাকে বেশিদিন কারাগারে আটকে রাখা যায়নি। আদালতে নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার শর্তে জামিন পেলেও এরপর আর তার কোনো খোঁজ নেই।

আবু আজাদ/এমএমজেড/পিআর

আরও পড়ুন