কেমন আছেন সেই খাদিজা?
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজে প্রকাশ্যে কলেজছাত্রী খাজিদা বেগম নার্গিসকে কোপানোর দৃশ্য দেখে আতকে উঠেছিল সারাদেশ। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলমের এলোপাতাড়ি কোপে মৃত্যুর মুখে পতিত হন খাদিজা। কিন্তু উন্নত চিকিৎসা আর সরকারের সহযোগিতায় মৃত্যুকে জয় করে ফিরে আসেন তিনি। সে সময় সারাদেশ খাদিজার পাশে দাঁড়ায়। এমনকি স্বয়ং প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন এ বিষয়ে।
দেশ বিদেশের আলোচিত সেই খাদিজা এখন কেমন আছেন? কেউকি তার খবর রাখছে?
সিলেট সদর উপজেলার হাউসা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় খাদিজা ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। ভালো নেই খাদিজা। ফ্রি চিকিৎসা আর খোঁজ-খবর ততদিন ছিল যতদিন গণমাধ্যমে তার নিয়মিত খবর আসত। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না বাবা-মা। বাম হাতের অবস্থা এতই নাজুক যে রুটিন মতো সপ্তাহে তিন দিন থেরাপি নিতে হয়।
কিছুদিন আগে দেড় লাখ টাকা খরচ করে বাম হাতের একটি অপারেশন করিয়েছেন কিন্তু তাতেও হাত ভালো হয়নি। হাতের আঙুল সোজা করতে পারছেন না। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। সৌদি আরব প্রবাসী বাবার পক্ষে এত বড় সংসার চালিয়ে খাদিজার চিকিৎসা চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে খাদিজা বলেন, প্রায় ২০ জনের যৌথ পরিবারের খরচ চালানোর পর আমার চিকিৎসার খরচ মেটানো আব্বুর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। টাকার অভাবে সুস্থ জীবনে ফিরতেও পারছি না।
তিনি বলেন, এখনও সব সময় ভয়ে থাকি। সিলেট সরকারি মহিলা কলেজে থেকে স্নাতক ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষা করছি কিন্তু যেখানেই থাকি মনে ভয় কাজ করে।
এখনও খুঁড়িয়ে হাঁটেন খাদিজা। বা হাতের আঙুলগুলো সোজা করতে পারেন না। বাম হাত দিয়ে কোনো কাজও করতে পারেন না। মাথায় ব্যাথা লেগেই থাকে। প্রায়ই স্মৃতিবিভ্রাট ঘটে। তবু তার দু’চোখ ভরা স্বপ্ন সরকারসহ যে কেউ আবারও পাশে দাঁড়াবে, তার চিকিৎসা হবে।
খাদিজা জানান, শুরুতে সরকারসহ সবাই পাশে দাঁড়ালেও, চিকিৎসার ব্যয় দিলেও এখন আর কেউ খোঁজ করে না। ফলে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠা অনিশ্চিত হয়ে গেছে।
অথচ ওই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে খাদিজাকে নিয়ে তৎপর হয় প্রশাসন, দ্রুত নিয়ে আসা হয় ঢাকায়, নামি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা হয়। প্রায় নিত্যদিন তাকে নিয়ে সংবাদ হয়েছে, তাকে দেখতে গেছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা, মানবাধিকার কর্মী, নারী নেত্রী, বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারাও। প্রায় ভিআইপি মর্যাদায় চিকিৎসা হয়েছিল খাদিজার।
খাদিজার চিকিৎসার ব্যয় মেটানোর ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। স্কয়ার হাসপাতালে দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল চিকিৎসার এক টাকাও দিতে হয়নি খাদিজার পরিবারকে। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতাল ছেড়ে সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে ২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন তিনি। এরপরই খাদিজা চলে যান দৃষ্টির আড়ালে।
খাদিজা বেঁচে উঠেছেন ঠিকই, কিন্তু তার জীবন সংগ্রাম শেষ হয়নি। কারণ তার চিকিৎসার এখনও অনেক বাকি। আর টাকার অভাবে সেটা করতে পারছে না পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে খাদিজার বাম হাতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এজন্য ৫ লাখ টাকার মতো লাগবে। টাকা জোগাড় করতে না পারায় এখনও অস্ত্রোপচার করাতে পারছেন না।
খাদিজার ছোট ভাই নুর আহমেদ বলেন, আমাদের যৌথ পরিবারের ২০ জনের খরচ চালিয়ে এবং আমাদের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পর আব্বুর পক্ষে আপুর চিকিৎসার এত খরচ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকার যদি সাহায্য করে তাহলে সে সুস্থ সাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে।
খাদিজা বলেন, জানি না কোনোদিন সুস্থ হতে পারব কিনা। তবে আর কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন এমনটা না হয়। বদরুলের বিচারের জন্য কৃতজ্ঞ। তবে যেভাবে আমার জীবনকে কষ্টকর করেছে তাতে তার আরও শাস্তি প্রাপ্য ছিল।
উল্লেখ্য, খাদিজাকে কোপানোর দায়ে ২০১৭ সালের ৮ মার্চ বদরুলকে যাবজ্জীবন সাজার রায় দেন আদালত। এর আগে ছাত্রলীগও বহিষ্কার করে তাকে।
এফএ/এমএস