নারীর অধিকার আদায়ে সুনামগঞ্জে লড়ছেন তারা
সুনামগঞ্জে নারীদের উপর অত্যাচার নিপীড়ন ও নারী অধিকার আদায়ের জন্য লড়ে যাচ্ছেন দুই নারী। তারা হলেন, শীলা রায় ও সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদের সভাপতি গৌড়ি ভট্টাচার্য্য। ছোটবেলা থেকেই নারীদের প্রতি অত্যাচার ও বৈষম্য তাদের করে তোলে নারী অধিকার আদায়ে আন্দোলনকারী। সুনামগঞ্জের কোথাও নারীদের উপর অত্যাচার হলে তারাই আন্দোলন করেন।
শীলা রায় তার শৈশবে দেখেছেন মেয়েদের উপর অত্যাচার তথা বৈষম্য। কিন্তু তখন কিছু করার ছিলো না তার। ১৯৬১ সালে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করার পর নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি লড়েছেন নারীদের অধিকার আদায়ে। দিয়েছেন নারীদের শিক্ষার আলো। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় নারীদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। নির্যাতিতা নারীদের আগলে রেখেছেন নারী নেত্রী শীলা রায়।
তিনি বলেন, আমরা নারীরা কিন্তু এখনো স্বাধীন না। হ্যাঁ, মুখে বলা হয় স্বাধীন কিন্তু আসলে তা না। নারীদের অধিকার সঠিকভাবে দেয়া হচ্ছে না। এখনো প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। তারা বাইরে নিরাপদ নয়। আমাদের কাগজে কলমে নারীদের অধিকারের কথা থাকলেও বাস্তবে তা কিন্তু নেই।
তিনি আরও বলেন, সরকার নারীদের উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে এবং আমাদের নারীরা আজ সবকিছুতেই আছে। কিন্তু তারপরও নারীরা নিরাপদ নয়। রাতের আঁধারে কেউ ধর্ষণ হচ্ছে বা কেউ হচ্ছে নির্যাতনের শিকার। বাস্তব জীবনে অনেক দেখেছি এবং এখনো দেখছি নারীরা আজও পরাধীন।
অন্যদিকে রয়েছেন গৌড়ি ভট্টাচার্য্য। প্রচার বিমুখ এই নেত্রী রয়েছেন সুনামগঞ্জ মহিলা পরিষদে। তারও শৈশবে নারীদের প্রতি অত্যাচার বৈষম্য তাকে তৈরি করেছে একজন নেত্রী। ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদে যোগ দেন তিনি। তখন সাহসের সঙ্গেই লড়েছেন নারীদের উপর অত্যাচার, বৈষম্য ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, নারীদের বাড়ি নেই। তাদের নিজস্ব কোনো ঘর নেই। যা আছে ২টা তা হলো পরের বাড়ি। একটি বাবার আরেকটি স্বামীর। তাহলে নারীর বাড়ি কেন নেই। বর্তমানে সুনামগঞ্জে স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে কিন্তু কেন সে আত্মহত্যা করবে। অবশ্যই কোনো চাপের মুখে বা একাকিত্বের কারণে আত্মহত্যা করছে। আমাদের এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। স্কুল পড়ুয়া অবুঝ শিশুরা এই রকম আত্মহত্যা করবে তা কখনোই কাম্য নয়। আমাদের কাছে নির্যাতিতা নারীরা এলে আমরা তাদের কথা শুনি এবং অ্যাকশন নেই। কিন্তু অনেক সময় আমরা আদালতে মামলা করলেও পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবার তা উঠিয়ে নিতে চায়। তার কারণ ভয়। নারীদের মধ্যে এখনো অনেক ভয় কাজ করে। তাই নারীদের ভয় নয় সাহস প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, আজকে আমাদের মেয়েরা কিন্তু নিরাপদ নয়। ডিজিটাল হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই ডিজিটালের সুফল ব্যবহারের পাশাপাশি তার কুফলও রয়েছে অনেক। একটি মেয়ের বিরুদ্ধে দুই লাইন খারাপ শব্দ লিখলেই মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে যায়। কেন এই মানসিকতা? আমি যতদিন বেঁচে আছি কখনও বলব না আমরা স্বাধীন। নারীরা এখনো স্বাধীন হয়নি। সেই সূর্য কখন উঠবে তা আমার জানা নেই।
এই দুই নারীর হাত ধরেই সুনামগঞ্জে বিভিন্ন নির্যাতিত, ধর্ষিত নারীরা বিচার পেয়েছেন। নারী নেত্রী শীলা রায় নারী অধিকারে ও সংগ্রামের কারণে ২০১৮ সালে পেয়েছেন রোকেয়া সম্মাননা পদক। আর প্রচার বিমুখ গৌড়ি ভট্টাচার্য্য রয়েছেন নারী অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।
মোসাইদ রাহাত/এফএ/এমএস