মানুষকে ভালোবাসতে চান তাসলিমা
সমাজ সেবায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। প্রকৃতির সঙ্গে মিশতে ভালোবাসেন। মানুষকে সহজেই আপন করে নিতে পারেন। সদা হাস্যোজ্জল সাদা মনের এ মানুষটি তাসলিমা ফেরদৌস।
নওগাঁর পরিচিত মুখ। যুবকদের কাছে তিনি আন্টি (খালামনি) নামে পরিচিত। যুক্ত রয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে। সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখায় গত ২ মার্চ রাজধানীর প্যান প্যাসিফিকে ‘স্কয়ার’ থেকে সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ক্যাটাগরিতে ৬৪ জেলার মধ্যে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা-২০১৮’ গ্রহণ করেছেন।
জানা গেছে, এ মানুষটি অনুসরণ করেন বিশ্বের মহিয়সী নারী মাদার তেরেসাকে। তেরেসার অবয়বে নিজেকে তৈরি করতে চেষ্টা করছেন। গায়ে সবসময় একটা সাদা চাদর জড়িয়ে রাখেন। মানুষের প্রতি উদারতা ও মহানুভবতা প্রকাশ করেন। দাম্পত্য জীবনে দুই ছেলে-মেয়ে। স্বামী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা।
মনের সুপ্ত বাসনা প্রতিষ্ঠিত করতে নওগাঁ সদর উপজেলার প্রত্যন্ত ইলশাবাড়ী অজপাড়াতে ২০০৫ সালে ‘বেলাশেষে’ নামে একটি প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলেন। যেখানে স্থান পেয়েছে ২০ জন প্রবীণ অসহায় মা। মূলত অর্থনৈতিকভাবে অস্বচ্ছল, অভাবী, চিকিৎসার কোনো সু-ব্যবস্থা নেই, সমাজ থেকে অবহেলীতদের স্থান দেয়া হয়।
সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠা এ প্রবীণ নিবাসে কোনো রকম দেশি-বিদেশি সংগঠনের আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন মনে করেন না তিনি। কেবলমাত্র প্রবীণ নারীদের কল্যাণে প্রচার বিমুখ এ মানুষটি কাজ করে যাচ্ছেন নীরবে নিরলসভাবে।
নওগাঁ শহরের গীতাঞ্জলি মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ‘আড্ডায় কফি’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে কাজ করেন ১২ জন ছাত্রসহ বেকার যুবক। দরিদ্র শিক্ষার্থী যাদের পড়াশোনার খরচ পরিবার থেকে বহন করা সম্ভব হয় না। তাদেরকে এখানে কাজের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররা এখানে থাকা-খাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া তাদের মাসে একটা নির্দিষ্ট খরচও দেয়া হয়। আর এখানে যে আয় হয় তার একটা অংশ প্রবীণ নিবাসের জন্য ব্যয় করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও তিনি সক্রিয়। রক্তের প্রয়োজনে কোনো ব্যক্তি তার কাছে সাহায্য চান সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার আইডিতে পোস্ট দেন। দেখা যায় কিছু সময়ের মধ্যে রক্ত সংগ্রহ হয়ে গেছে। তিনি নিজ খরচে ব্লাড ডোনারকে ব্লাড ব্যাংকে নিয়ে ওই অসহায় ব্যক্তিকে সহযোগিতা করে থাকেন।
গত ২০১৭ সালে বন্যার সময় তিনি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। জেলার ১১টি উপজেলা যখন অধিকাংশ বন্যা কবলিত। তিনি নিজ থেকে শুকনো খাবার সংগ্রহ করে নৌকায় চড়ে গিয়ে দিয়ে এসেছেন। বন্যায় যখন ধান ডুবে নষ্ট হয়েছিল বন্যা পরবর্তী সময় তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছিলেন। এ ছাড়া নারী কৃষানীদের মাঝে শাক-সবজির বীজ বিতরণ করেছিলেন যাতে কিছুটা হলেও অভাব দূর হয়।
নারী নির্যাতন ও বাল্য-বিবাহ নিয়েও তিনি কাজ করে চলেছেন। বাল্য-বিবাহের কুফল সম্পর্কে গ্রামের মানুষদের সচেতন করেন। যেন তাদের মেয়েকে অল্প বয়সে বিয়ে না দেয়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলে মেয়েরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় সে বিষয়গুলো নিয়ে অভিভাবকদের সচেতন করেন।
সমাজসেবী তাসলিমা ফেরদৌস বলেন, ‘আসলে কোনো সম্মাননার জন্য আমি কাজ করি না। সমাজের মানুষের জন্য কিছু করতে চাই। মানুষকে কিছু দিতে পারলেই আমার ভালো লাগে। সারা বাংলাদেশের মধ্যে চারটি ক্যাটাগরিতে চার জনকে ‘রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা’ দেয়া হয়েছে। সমাজের জন্য কিছু করতে পেরেছি এখনো করে যাচ্ছি। তার বিনিময়ে যে ফলাফল জাতীয় পর্যায়ে এতবড় একটা সম্মাননা পাব তা ছিল কল্পনার বাহিরে। এটি ছিল সত্যিই অবিশ্বাস্য। কারণ আমি এখনো যোগ্যতা অর্জনের জন্য শুধু চেষ্টা করে চলেছি।
আব্বাস আলী/এমআরএম/এমএস