নারী দিবস কী জানার সময় কই হামার?
দেশে নারীদের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও পশ্চাৎপদ এলাকা কুড়িগ্রামের নারীরা পিছিয়েই রয়েছেন। শহরের তুলনায় সীমান্তবর্তী আর চরাঞ্চলের নারীরা বেশি পিছিয়ে।
জেলার প্রায় প্রায় ৪-৫ লক্ষাধিক মানুষ এ চরেই বসবাস করছে। যেখানে খরা-বন্যা-শীতসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগে থাকে সারা বছরই। কৃষিনির্ভর এই জেলায় বছরের অধিকাংশ সময় মানুষের হাতে কাজ থাকে না। দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর হলেও জেলায় এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো শিল্প কলকারখানা বা কোনো কর্মসংস্থান ব্যবস্থা। ফলে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে দেশের বিভিন্ন জেলায় কাজের সন্ধানে ছুটে চলেছেন জেলার খেটে খাওয়া মানুষ।
পুরুষ শাসিত সমাজে অনেক নারী আজ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্বীকার। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী ও চরাঞ্চলের নারীর সংখ্যায় বেশি। অবহেলিত নারী অধিকাংশই গরিব ও দুস্থ পরিবারের। জীবন-জীবিকার তাগিদে পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমান তালে দিনমজুরের কাজকর্ম করছেন। তবে নারীরা পুরুষের চেয়ে মজুরি কম পাওয়ায় তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
শুধু সমাজেই এই বৈষম্য না, সংসারে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও তারা স্বামী-শ্বশুরবাড়িতে নিগৃহিত। পাচ্ছেন না সঠিক মূল্যায়ন। এছাড়া মৌলিক অধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসার অভাব, বাল্যবিয়ে, যৌন হয়রানিসহ সমাজে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন পিছিয়ে পড়া এই জনপদের নারীরা।
ফুলবাড়ি উপজেলার সীমান্ত এলাকার অধিকাংশ নারীই আজও সমাজের অন্ধকারেই রয়ে গেছে। চরাঞ্চলসহ সীমান্তবর্তী অনেক নারী বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা, ভিজিডি কার্ড এবং প্রতিবন্ধী ভাতা থেকেও বঞ্চিত।
সীমান্ত ঘেঁষা গোরকমন্ডপ আবাসনের লাবনী বেগম, নাছিমা বেগম, শাহিদা বেগম, রশিদা বেগম, আকলিমা বেগম ও জাহেদা বেগমসহ অনেকে জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা এক প্রকার বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। এমনকি সরকারি অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। দরিদ্র ও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এখানে কোনো কাজের সুযোগ-সুবিধা নাই। সংসারে অভাব দূর করার জন্য ক্ষেতে খামারে কাজ করলেও ন্যায্য মজুরি পান না তারা। একই কাজ করে পুরুষরা দিনে ৩শ থেকে ৪শ টাকা মজুরি পেলেও নারীরা দেড়শ থেকে ২শ টাকা মজুরি পান।
পিছিয়ে পড়া এসব নারীরা আরও বলেন, নারী দিবস কী আমরা জানি না? পেটের দায়ে মাঠে খামারে কাজ করতে যাই, নারী দিবস-টিবস জানার সময় কই হামার। হামার অধিকার কী? এগুলা নিয়ে ভাবার সময় নাই। শুধু জানি সংসার চালাইতে হবি। মেম্বার-চেয়ারম্যানরা ভোট নিয়ে চলে যায় আবার ভোটের সময় আসে। এরমধ্যে তাদের দেখা পাওয়া ভার। শুধু দুই ঈদে ইলিফ (রিলিফ) পাই আর কিছুই পাইনা বাহে। ইলিফ দিয়া কি হবে হামরা সরকারের কাছে কাজ চাই-কাজ করে বাঁচতে চাই হামরা।
কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড.আহসান হাবীব নীলু জানান, শুধু নারী দিবস নয় সরকারের বিভিন্ন দিবসগুলো শহর কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। আর এসব র্যালিতে ঘুরে ফিরে পরিচিত মুখ গুলোই দেখা যায়। নারীদের নিয়ে কাজ করে যেসব নারী সংগঠনগুলো তারাও শহরমুখি। ফলে চরাঞ্চল বা সীমান্তবর্তী এলাকার নারীরা তাদের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। নারীদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করার উপর তাগিদ দেন তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিলুপ্ত ছিটমহল দাশিয়ারছড়ায় ট্রেনিং সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি। এখানে সীমান্তবর্তী মানুষ প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে।
নাজমুল হোসেন/এফএ/এমএস