চ্যালেঞ্জ নিয়ে রাজপথে নারী পুলিশ কর্মকর্তা রাখি রানী
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের অজপাড়া গাঁ থেকে নানা সমস্যা ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে উঠে আসা নারী রাখি রানী দাস। তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করছেন অন্য ১০ জন পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। তিনি জয়িতা, অদম্য, কর্তব্য পালনে সদা প্রস্তুত।
‘সময়ের বিবর্তনে সববাধা পেরিয়ে নারী জাগরণে এগিয়ে তিনি। মেধা-মনন সৃজনশীলতায় পিছিয়ে নেয় এ স্বপ্নজয়ী নারী। সমাজকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয়ে কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের দক্ষতা ও কৃতিত্ব প্রমাণ করে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয়। একান্ত আলাপচারিতায় ওঠে আসে জীবনের গল্প। এ সময় রাখি রানী দাসের সহকর্মী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, রাখি রানীর, সততা পরিশ্রমী ও প্রতিশ্রুতিশীল মানসিকতার কথা।
রাজপথে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘নারীরা এখন রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন, পর্বত জয় করছেন, অগ্রণী ভূমিকা রাখছেন অর্থনৈতিক উন্নয়নে। সব ধরনের খেলায়ও পুরুষের পাশাপাশি আজকের নারীরা পারদর্শিতা দেখাচ্ছেন। নারী অধিকার ও ক্ষমতায়নে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।’
তবে এ পর্যন্ত আসতে কখনই তার পথচলা মসৃণ ছিল না। বাধা এসেছে বহুবার, তবে অদম্য মনোবলে জয় করেছেন সবকিছু। প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ঠেলেই নারীকে এগিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন এ নারী কর্মকর্তা।
নিজের কর্মস্থল সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আগের পুলিশ আর বর্তমান পুলিশ এক নয়। তার কথায় উঠে আসে নারী পুলিশদের সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা এখনও চ্যালেঞ্জিং। নারী পুলিশদের মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- দৃষ্টিভঙ্গির। সাধারণ জনগণ অনেক ক্ষেত্রে একজন পুরুষকে যেভাবে নিচ্ছে, সেভাবে একজন নারীকে গ্রহণ করছে না। এই প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েও নারী পুলিশরা এগিয়ে যাচ্ছে।’
শৈশবে স্মৃতিচারণা করে রাখি রানী বলেন, ‘আমার বাবা-মা দু’জনই ছিলেন স্কুল শিক্ষক, তাদের চাকরি সূত্রে আমার শৈশবের পুরোটা গ্রামে কেটেছে। পিতার নাম রতি রঞ্জন দাস। তিনি (অব.) প্রধান শিক্ষক। মায়ের নাম লিপিকা রানী দাস তিনি ও সহকারী শিক্ষক। তিন বোনের মধ্যে তিনি প্রথম। এক সন্তানের জননী রাখি রানী দাস। স্বামী ডা. হিমাংশু দাস সৌম্য, সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার হিসেবে কর্মরত।’
রাখি জানান, তিনি হাওর অঞ্চলের সন্তান। ২০০১ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০০৩ সালে সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। ২০০৭ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে একই বিষয়ে ২০০৮ সালে মার্স্টাস পাস করে।
লেখাপড়া শেষে প্রথমে ২০১১ সালে চাকরি জীবন শুরু। সিলেট নগরের ব্লু-বার্ড স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। স্বপ্ন ছিল মানবতার সেবায় নিয়োজিত হবেন। স্বপ্ন ও সম্ভাবনায় ২০১৩ সালে ৩১তম বিসিএস ক্যাডার হন (পরিবার পরিকল্পনা)। কিন্তু এমন সফলতায় তিনি খুশি হননি। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে আবার ৩৩ বিসিএস দেন এবং সেখানে তার পছন্দের পুলিশ ক্যাডারে পাস করে একই বছর ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট সহকারী পুলিশ কমিশনার হয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ সদর দফতরে চাকরিতে যোগদান করেন।
পরবর্তীতে সিলেটে দায়িত্ব পান অর্থ হিসাব ও নিরীক্ষা শাখায়। সফলতার সঙ্গে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের ইনচার্জ হিসেবে রয়েছেন। জনসেবার পাশাপাশি আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছেন বলে জানান তার সহকর্মীরা। তারা বলেন, ‘গ্রামের ভাটি অঞ্চল থেকে একজন নারী উঠে এসে পুলিশ বিভাগে দেশের হাল ধরেছেন তার বাস্তব প্রমাণ এই সিলেটের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাখি রানী দাস।’
একজন নারীর পুলিশে কাজ করা চ্যালেঞ্জিং, সেক্ষেত্রে নিজেকে কতটুকু মেলে ধরতে পেরেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রাখি বলেন, ‘নারী পুলিশ হিসেবে এই পেশাটি চ্যালেঞ্জিং। প্রতি মুহূর্তে ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আমাদের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে হয়, কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয়। তবে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পেরে দিন শেষে এক ধরনের ভালোলাগা কাজ করে।
ছামির মাহমুদ/এমআরএম/এমএস