নৌকাকে জেতাতে শিক্ষকদের সঙ্গে এমপির দর-কষাকষি
রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সময় সমিতির তহবিলে পাঁচ লাখ টাকা প্রতিদান চেয়েছেন শিক্ষকরা। বুধবার দুপুরে উপজেলার কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের বার্ষিক সভা ও মিলন উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেয়ার সময় শিক্ষকদের সঙ্গে দর-কষাকষিতে জড়ান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী।
বেলা ১১টার পর থেকে রাজশাহী নগরীর পদ্মাপাড়ে বিজিবি পরিচালিত পার্ক সীমান্ত নোঙরে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গোদাগাড়ী উপজেলা কলেজ শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ সমিতির এই আয়োজনে অংশ নেন প্রায় ৮০০ মানুষ। এদের মধ্যে ৩২০ জন উপজেলার ১৪টি কলেজর শিক্ষক। আগামী ১০ মার্চের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এদের অধিকাংশই প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
অনুষ্ঠানে ফারুক চৌধুরী বলেন, পিকনিকে এসে আপনাদের ভালো লাগে না? আমাদের তো ভালোই লাগে। আপনাদের কিন্তু একটা জিনিস জানা দরকার। এই পিকনিক আপনারা যে টাকা সমিতিতে জমা দেন সেই টাকায় হয় না, আউট সাইড থেকে হয়। আপনারা শিক্ষকরা এই আমাদের মতো, মজিদ মেয়রদের মতো, রশিদ সাহেবদের মতো, আমাদের সাধারণ সম্পাদক- এ রকম লোকদের ঘাড় মটকে খেয়ে নেন ।
এ সময় সংগঠনের তহবিলে টাকা দেয়ার জন্য এমপির কাছে দাবি জানান শিক্ষকরা। এমপি প্রশ্ন করেন, এক লাখ টাকা? একজন শিক্ষক বলেন, গতবার তিন লাখ টাকা দিতে চেয়ে এমপি ভুলে গেছেন। প্রতি উত্তরে এমপি বলেন, নির্বাচনের কারণে সেটা পরিনি। বকেয়া তিন লাখ এবার পরিশোধ করে দিব। তখন শিক্ষকরা তাদের তহবিলে এমপির কাছে ছয় লাখ টাকা দাবি করেন।
এ সময় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, প্রিন্সিপাল রাজু বলছেন যে আমরা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যানকে (প্রার্থীকে) জিতিয়ে দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে নিব, আপনি শুধু ঘোষণা দিয়ে দেন। কি আপনারা পারবেন? কই জোর দেখছি না তো। তখন শিক্ষকরা একটু করতালি দেন।
এমপি আবার বলেন, জোর দেখছি না কিন্তু এখনও। শিক্ষকরা তখন আরও জোরে করতালি দেন। এমপি আবার বলেন, কই কই কই কই? শিক্ষকরা আরও আরও জোরে করতালি দিতে থাকেন। এমপি বলেন, যাই হোক, এটা আমার প্রস্তাব না কিন্তু। আমি প্রস্তাব দেইনি। এটা প্রিন্সিপালদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। সুতরাং আমি কিছু বলতে পারব না।
বক্তব্যের শুরুতে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত করার কাজে সক্রিয়ভাবে আপনাদের অংশগ্রহণ করা এবং মানসিক শক্তি দেয়ার জন্য আমি আমার পক্ষ থেকে সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি আপনাদের কাছে প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য এবং নৌকা প্রতীকের জন্য আপনাদের এই আন্তরিকতা সব সময় পদ্মা নদী দিয়ে যে রকম কোটি কোটি গ্যালন পানি প্রবাহিত হয় সেইভাবে আপনাদের ভালোবাসা প্রবাহিত হতে থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতীক নৌকা এখানে সব সময় বিজয়ী হবে। কারণ প্রধানমন্ত্রীকে যত শক্তিশালী আপনারা করতে পারবেন প্রতিটি স্টেজে বেনিফিশিয়াল আমরা সকলে হব।
এর আগে বক্তব্য দেন কাঁকনহাট পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মজিদ। তিনিও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে জেতাতে শিক্ষকদের কাজ করার আহ্বান জানান। উপজেলার চব্বিশনগর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন মেয়র মজিদ।
সমিতির সভাপতি ও উপজেলার গুলগফুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে অতিথি ছিলেন এমপিপত্নী নিগার সুলতানা চৌধুরী পারুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রশিদ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন গুলগফুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ডা. নাসির উদ্দিন, পালপুর ধরমপুর কলেজের সভাপতি একেএম আতাউর রহমান খান, রাজাবাড়ি ডিগ্রি কলেজের সভাপতি শাহাদুল হক, গোদাগাড়ী মহিলা কলেজের সভাপতি রবিউল হক, মাটিকাটা আদর্শ কলেজের সভাপতি সাবিয়ার রহমান, পাকড়ি মহাবিদ্যালয়ের সভাপতি এন্তাজুল হক মানু প্রমুখ।
আসন্ন এই নির্বাচনে উপজেলায় চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেননি। কিন্তু অনুষ্ঠান স্থলে তার পোস্টার সম্বলিত একটি প্রাইভেটকার ও একটি মাইক্রোবাস দেখা যায়।
নৌকা প্রতীক না পাওয়ায় আনারস প্রতীকে ভোটের মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদিউজ্জামান।
বদিউজ্জামান বলেন, শিক্ষকরা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন প্রভাবিত ও কারচুপির উদ্দেশ্যেই সমিতির নামে শিক্ষকদের নিয়ে এ আয়োজন পরিকল্পিত। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি শিক্ষকদের এলাকার বাইরে ডেকে তাদের সঙ্গে আঁতাত করতে চাইছেন। তাদের উৎকোচ দিয়ে উপজেলা নির্বাচনকে কলুষিত করতে চাইছেন।
এ বিষয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনে এসব কলেজ শিক্ষকরা প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এই সমিতির অধীনে কতজন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আছেন সেটি খতিয়ে দেখা হবে।
এদিকে বুধবার সকালে রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারা যেন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্পিকারকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজশাহী ও নাটোরের দুইজন সংসদ সদস্যকে চিঠি দিয়ে এলাকার ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপরও কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচন কমিশন আইনগত ব্যবস্থা নেবে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/আরএআর/পিআর