ডিটারজেন্ট তৈরির সোডিয়াম সালফেট মেশানো হচ্ছে লবণে
কক্সবাজারে লবণে মেশানোর জন্য নিয়ে আসা ৫০০ বস্তা সোডিয়াম সালফেট জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার সদরের ইসলামপুর থেকে ডিটারজেন্ট ও সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক এসব সোডিয়াম সালফেটসহ একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করে পুলিশে দেয় জনতা।
এ সময় রুম্মান ট্রেডার্স ও মেসার্স নিউ পায়রা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি নামে কয়েকটি চালান ফরমও জব্দ করা হয়েছে। জব্দকৃত বস্তাগুলোর গায়ে ‘গ্লোবাল সল্ট’ ও ‘মেড ইন চায়না’ লেখা রয়েছে।
লবণ সংশ্লিষ্টদের মতে, ইতিপূর্বে ইসলামপুরে সোডিয়াম সালফেট কেউ আমদানি করেনি। এই প্রথম শরীরের জন্য ক্ষতিকারক এ বস্তু আমদানি করেছে লবণশিল্প ধ্বংসকারী চক্র। মূলত দেশীয় লবণের সঙ্গে মিশিয়ে অধিক মুনাফার উদ্দেশ্যেই দেখতে লবণের মতো কিন্তু কম দামি সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে লবণশিল্প এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।
ইসলামপুরের বেশ কয়েকজন লবণ মিল মালিক জানিয়েছেন, ডিজিটাল সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোকতার আহমদ গ্লোবাল সল্টের নাম দিয়ে সোডিয়াম সালফেট আমদানি শুরু করেছেন। তার কারণে ইসলামপুরের প্রকৃত লবণ ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ।
বিসিকের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৪ লাখ মেট্রিক টন সোডিয়াম সালফেট (যা দেখতে লবণ, তবে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর) আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্যামিকেল কোম্পানি ডিটারজেন্ট ও সাবান তৈরি করতে ভারত ও চীন থেকে এসব সোডিয়াম সালফেট আমদানি করে। এ সোডিয়াম সালফেট দিয়ে খাবার লবণ তৈরি করছে বিভিন্ন লবণ কোম্পানি। এ কারণে ৫০০ টাকার লবণ হয়ে গেছে ১৫০ টাকা।
তথ্য মতে, খাবারের লবণ আর পণ্য প্রস্তুতকরণের লবণ এক নয়। রান্নায় আমরা যে লবণ ব্যবহার করি তা মূলত সোডিয়াম ক্লোরাইড। আর শিল্পদ্রব্য প্রক্রিয়াজাতে যে লবণ প্রয়োজন হয় তা সোডিয়াম সালফেট, যা মানবদেহের জন্য শুধু ক্ষতিকরই নয় প্রাণঘাতীও বটে। অভিযোগ উঠেছে, বিষাক্ত সোডিয়াম সালফেট এখন খাবার লবণ হিসেবে বাজারে অনৈতিকভাবে বিক্রি হচ্ছে।
ইসলামপুর লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি মো. শামসুল আলম আজাদ বলেন, লবণ উৎপাদনের এই মৌসুমে সোডিয়াম সালফেট আমদানি করা লবণ শিল্পের জন্য একটি অশনি সংকেত। এই প্রক্রিয়া বন্ধ করা না গেলে লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেকোনো মূল্যে লবণশিল্প বিরোধী এই অপতৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।
মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক সোডিয়াম সালফেট আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম (দাদা)।
তার মতে, লবণের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত ও দেশের লবণ শিল্প বাঁচাতে ষড়যন্ত্রকারীদের রুখতে হবে।
মজুদ থাকা সত্ত্বেও লবণ আমদানি এবং সোডিয়াম সালফেট -এ দুই কারণে স্থানীয় লবণশিল্প ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।।
ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান খান বলেন, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। লবণ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে প্রাণঘাতী এ পণ্য আমদানিকারকদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সায়ীদ আলমগীর/আরএআর/এমকেএইচ