সুনামগঞ্জে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ
সুনামগঞ্জে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি হাওরের বোরো ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সরকারি হিসেবে নির্ধারিত দিনে এসে ৮৬ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার দাবি করা হয়েছে। তবে এ তথ্য ভুয়া দাবি করছেন কৃষকরা।
অন্যদিকে জেলা কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। যার ফলে আরও ১৫ দিন সময় বাড়িয়ে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের মাত্র ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি হিসেবের ৮৬ ভাগ কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদনকে প্রত্যাখ্যান করেছেন কৃষক সংগঠনের নেতারাও। হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলন বাঁধের কাজে বিলম্ব হওয়ার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার জেলার প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে একযোগে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জের ৩৭টি হাওরের প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। বাঁধ নির্মাণে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে কৃষকদের মাধ্যমে ৫৬৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) গঠনের মাধ্যমে ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরুর কথা ছিল। গণশুনানি করে বাঁধ সংলগ্ন এলাকার কৃষক ও জমির মালিকদের দিয়ে গত অক্টোবরেই পিআইসি গঠনের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। কাজ শুরু হয় অনেক পরে।
নির্ধারিত সময়ে এসে জেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলায় হাওরের ৮৬ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিবেদনে এখনো বাঁধের স্লোপ, কমপেকশন ও ঘাস লাগানোর কাজ চলছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সরকারি হিসেবে সদর উপজেলায় ৮৫ ভাগ, ধর্মপাশায় ৮৬ ভাগ, জামালগঞ্জে ৮৮ ভাগ, তাহিরপুরে ৮৫ ভাগ, বিশ্বম্ভরপুরে ৯০ ভাগ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৮২ ভাগ, ছাতকে ৯০ ভাগ, জগন্নাথপুরে ৮৭ ভাগ, দোয়ারাবাজারে ৮৮ ভাগ, দিরাইয়ে ৮৮ ভাগ এবং শাল্লায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে বলে দবি করা হয়েছে। গড়ে ৮৬ ভাগ কাজ হয়েছে বলে জানানো হয় সরকারি ওই প্রতিবেদনে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কাজের গতি কম। বৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় সময় বাড়ানোর জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য সভা করেছে জেলা কাবিটা বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। আগামী রোববার এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক, চিন্তার কিছু নেই। তবে কিছু কারণে কয়েকটি বাঁধের কাজে সমস্যা হচ্ছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে কাজ করা যায়নি। ফলে কাবিটা মনিটরিং ও বাস্তবায়ন কমিটি আরও ১৫দিন সময় বাড়ানোর জন্য প্রস্তাব করেছে।
মোসাইদ রাহাত/আরএআর/এমকেএইচ