পদ্মা-গড়াইয়ের প্রেম জমতেই দেড় বছর
রাজশাহীতে ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর প্রেম জমতেই কেটে গেল দেড় বছর। এ মৌসুমেই তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসতে পারে।
এই পদ্মা ও গড়াই আসলে মিঠাপানির দুই ঘড়িয়াল। বিশ্বব্যাপী মহাবিপন্নের তালিকায় রয়েছে এই প্রণী যুগল। বিলুপ্তি ঠেকাতে রাজশাহীর শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার পুকুরে এদের প্রজননের উদ্যোগ নেয়া হয়।
এরই অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে পুরুষ ঘড়িয়াল ‘গড়াই’ বর বেশে পা রাখে রাজশাহীতে। সেখানে তার অপক্ষোয় প্রহর গুনছিল মাদি ঘড়িয়াল ‘পদ্মা’।
প্রায় তিন দশক ধরে আরেক মাদি ঘড়িয়াল ‘যামিনী’ ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। একই দিনই ‘যামিনী’ চলে যায় ঢাকা চিড়িয়াখানায়। সেখানে তার সঙ্গী চার পুরুষ ঘড়িয়াল। কিন্তু এই দেড় বছরে সেখানেও আসেনি নতুন অতিথি।
‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর সংসারে নতুন অতিথি আসুক সেই আয়োজনে এখনও ব্যস্ত চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে তাদের প্রস্তুতিরও কমতি নেই। যে পুকুরে এই যুগলের বাস, সেটি তাদের বাসযোগ্য করে গড়ে তোলা হয়েছে। ঘড়িয়াল ডিম দেয়ার পর তা গর্ত করে ঢেকে রাখে। এই সুবিধা নিশ্চিত করতে মাঝ পুকুরে বালির ঢিবি তৈরি করা হয়েছে।
এই যুগলের দেখভালে নিয়োজিত চিড়িয়াখানার কর্মীরা জানিয়েছেন, একই পুকুরে থাকলেও দীর্ঘদিন এরা আলাদা ছিল। শঙ্কা ছিল সংসারে বিবাদ বাধে কিনা। এই শঙ্কা থেকে তাদের খাবার দেয়া হত আলাদ। তবে ধীরে ধীরে এই দূরত্ব কমিয়ে আনা হয়েছে। এখন এরা একসঙ্গেই খাবার খায়। তাদের মধ্যে মিলনও দেখা গেছে।
চিড়িয়াখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি ঘড়িয়ালের প্রজনন মৌসুম। এবার ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর মিলিত হতে দেখা গেছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এরা ডিম দেয়।
ধারণা করা হচ্ছে, এই মৌসুমে ডিম দেবে ‘পদ্মা’। এরা সাধারণত ৩৫ থেকে ৪০টি ডিম দেয়। ৭০ থেকে ৯০ দিনের মধ্যেই ডিম ফুটে বেরিয়ে আসে বাচ্চা।
তিনি আরও বলেন, ঘড়িয়াল লাজুক ও শান্ত প্রকৃতির। এরা ৫০-৫৫ বছর বাঁচে। ‘পদ্মা’র বয়স ৪০ হয়ে গেছে। ‘গড়াই’ও প্রাপ্ত বয়স্ক। কিন্তু দীর্ঘদিন ‘যুগল আবাস’ পায়নি এরা।
আবার গঠনগত কিছু ভিন্নতাও রয়েছে। ফলে তাদের ঘনিষ্ট হতে এই সময় লেগেছে। আশা করা যাচ্ছে, এই মৌসুমেই নতুন অতিথি আসবে ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ এর সংসারে।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/জেআইএম