সিমলার আগে মেঘলাকে বিয়ে করেছিলেন পলাশ
ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’ উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারী নিহত পলাশ আহমদ চিত্রনায়িকা সিমলাকে বিয়ের আগে মেঘলা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেছিলেন। ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে বাবা-মায়ের অমতে মেঘলাকে বিয়ে করেছিলেন তিনি। তবে পলাশের উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনের কারণে সেই সংসার টিকেনি।
নিহত পলাশ আহমদ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ফিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে পিয়ার জাহানের ছেলে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১৪ সালে বগুড়া সদর উপজেলার সাতমাথা ভাইপাগলা মাজার এলাকার মেঘলা নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন পলাশ। তাদের সংসারে আড়াই বছর বয়সী আয়ান নামে একটি সন্তান রয়েছে। মেঘলা বগুড়ার স্থানীয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপালের মেয়ে। পলাশের উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপনের কারণে প্রায় দেড় বছর আগে তাকে তালাক দিয়ে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়ি বগুড়া চলে যান মেঘলা।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান, ১৯৯০ সালে কাজের উদ্দেশে তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে চার বছর থাকার পর দেশে ফিরে আসেন। পরে তিনি আবার সৌদি আরব চলে যান। ২০১২ সালে তিনি আবার দেশে ফেরেন। এর মধ্যে ছেলে পলাশ তাহেরপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা থেকে ২০১২ সালে দাখিল পাস করে। পরে সে সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হয়। সেখানে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায়। তারপর থেকে তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চিত্রনায়িকা সিমলাকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিয়ে করা স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। বিয়ের কথা সিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়। আমরা সিমলাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, তাকে বলেছি– আমার ছেলেকে যেন ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। ছোটবেলা থেকেই ছেলেটি অবাধ্য ছিল।
পিয়ার জাহান জানান, পলাশ গত ২০/২৫ দিন আগে গ্রামের বাড়িতে আসে। সাধারণত সে বাড়িতে এসে এতোদিন থাকতো না। বাড়িতে আসার পর সে অনেকটা পাল্টে যায়। মসজিদে যাওয়া-আসা করে, এমনকি আজানও দিয়েছে। শুক্রবার বাসা থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার মাকে বলে যায় ভ্রমণ ভিসায় দুবাই যাচ্ছে। তবে দুবাই যাওয়ার বিষয়ে তার বাবাকে কিছু বলেননি পলাশ। আর বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে প্রথমে তারা কিছুই জানতেন না। পরবর্তীতে তারা ফেসবুকের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন।
সোনারগাঁ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রোববার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ছবিটি পলাশের বলে নিশ্চিত করে। তবে যতটুকু খবর নিয়েছি তাতে পলাশ নেশাগ্রস্ত ছিল বলে জেনেছি।
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে দুবাইগামী বাংলাদেশ বিমানের ‘ময়ূরপঙ্খী’র ফ্লাইটটি (বিজি-১৪৭) ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে। প্রায় দুই ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাই চেষ্টার অবসান হয়। কমান্ডো অভিযানে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী তরুণ পলাশ নিহত হন। তিনি বিমানের ক্রুদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বারবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন।
শাহাদাত হোসেন/আরএআর/এমকেএইচ