দুই বোনের এক প্রেমিক, অতঃপর...
দীর্ঘদিন ধরে একে-অপরকে ভালোবাসেন ছাত্তার ও হালিমা। সম্পর্কের গভীরতায় প্রেমিকা হালিমার বাড়িতে প্রায়ই যাওয়া-আসা করতেন প্রেমিক ছাত্তার।
একপর্যায়ে প্রেমিকা হালিমাকে বাদ দিয়ে নজর পড়ে প্রেমিকার ছোট বোন লিমা আক্তারের ওপর। এরপর বড় বোন হালিমাকে বাদ দিয়ে ছোট বোন লিমাকে নিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান প্রেমিক ছাত্তার।
৪ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ভাটপাড়ার টেংরারটেক গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর প্রেমিক ছাত্তারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন প্রথম প্রেমিকা হালিমা আক্তার (১৬)। আর ছোট বোন লিমাকে (১২) নিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় ছাত্তারের বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করেন হালিমার বাবা ইব্রাহিম মিয়া।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্তার সরকারের সঙ্গে হালিমা আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সুবাদে ছাত্তার প্রায়ই হালিমার বাড়িতে আসা-যাওয়া করত। একপর্যায়ে ছাত্তারের নজর পরে হালিমার ছোট বোন লিমা আক্তারের ওপর। গোপনে সম্পর্ক গড়ে তুলে লিমার সঙ্গে। এরপর রাতের গভীরে লিমাকে নিয়ে পালিয়ে যায় সাত্তার।
অভিযুক্ত প্রেমিক ছাত্তার ওই এলাকার জয়নাল সরকারের ছেলে। ঘটনার পর লিমার বাবা বাদী হয়ে পলাশ থানায় ছাত্তারের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের মামলা করেন।
পাশাপাশি হালিমা আক্তার নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে প্রেমিক ছাত্তারের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা করেন। অপহরণ মামলার পর প্রেমিকা হালিমার ছোট বোন লিমা আক্তারকে উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, প্রেমিক ছাত্তার ও তার পরিবার দায়েরকৃত মামলা দুটির তুলে নিতে আপস-মীমাংসার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে প্রেমিকার ছোট বোন লিমা আক্তারকে বিয়ে করে ছাত্তার। পাশাপাশি প্রথম প্রেমিকা হালিমাকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা বলে ঘটনার মীমাংসা করা হয়। এরপর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে ছাত্তারকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, মোটা অংকের ক্ষতিপূরণের জন্য সাত্তারের বিরুদ্ধে মামলা দুটি দায়ের করা হয়। মামলা দুটি করা হয় হালিমা আক্তারের মামাতো ভাই শাহিন মিয়ার পরামর্শে। শাহিন মিয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে চাকরি করছেন। সেই সুবাদে হালিমার পরিবার শাহিনের সঙ্গে আলাপ করে ছাত্তারের বিরুদ্ধে অপহরণ ও ধর্ষণের মামলা করেন। পরে মোটা অংকের টাকা ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়।
জানা যায়, ছাত্তারের পরিবার মামলা দুটির আপসের কথা জানালে শাহিনের বাবা আব্দুল আলী মীমাংসার উদ্যোগ নেয়। একপর্যায়ে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আব্দুল আলী সালিস বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে হালিমাকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও লিমাকে বিয়ের কথা জানানো হয়। পরে ছাত্তারের পরিবার রাজি হয়ে স্থানীয় ইমাম দিয়ে বিয়ে পড়িয়ে লিমাকে ঘরে তুলে নেয়।
রোববার সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আদালতে দায়েরকৃত মামলা দুটি গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে মীমাংসার সিদ্ধান্ত নেয় দুই পরিবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গ্রাম্য সালিসে উপস্থিত এক ব্যক্তি বলেন, সালিসে হালিমার ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা ও লিমাকে বিয়ে দিয়ে তার নামে ছাত্তারের কিছু জমি লিখে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে আপস-মীমাংসার একটি লিখিত কাগজ তৈরি করা হয়। মীমাংসার কাগজ ইতোমধ্যে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে।
তবে টাকার মাধ্যমে আপস-মীমাংসার বিষয়টি অস্বীকার করে হালিমার মামা আব্দুল আলী বলেন, ছোট মেয়ে লিমা আক্তারের সঙ্গে সাত্তারের বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু লিমা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বিয়ে পড়ানো যায়নি। পরে তাদের বিয়ে হবে। প্রাথমিকভাবে কাবিন হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে পলাশ থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা বলেন, মামলা দুটির তদন্ত কাজ চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুনেছি গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিষয়টির মীমাংসা করেছে দুই পরিবার।
এএম/পিআর