পাঁচ বৃদ্ধের রিকশা চালানোর পেছনের কাহিনি
দুবেলা দুমুঠো ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন রাজবাড়ীর ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধরা। এই বয়সে যাদের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটানোর কথা তারা এখন জীবিকার সন্ধানে রিকশা চালাচ্ছেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত মান্নান তফাদারের ছেলে রফিক দফাদার (৬৫)। তার ৫ ছেলে-মেয়ে। কিন্তু এখনো তাকে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হচ্ছে। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তিনি রিকশা চালান। বর্তমানে তিনি টিবি রোগে আক্রান্ত। তাই নিয়মিত রিকশা চালাতে পারেন না। তারপরও জীবিকার তাগিদে তাকে রিকশা চালাতে হচ্ছে।
রিকশাচালক রফিক দফাদার জানান, তার সামান্য একটু জমি আছে, যা থেকে তিনি কিছু ফসল পান। তবে চাষাবাদে অনেক টাকা লাগে। অনেকেই চেয়ারম্যান-মেম্বরের কাছ থেকে সুবিধা পান কিন্তু তিনি পান না। এছাড়াও কিস্তির ঝামেলা রয়েছে তার।
অন্যদিকে আলীপুর ইউনিয়নের মৃত চাদাই খানের ছেলে মঈফল খান (৬৩) ১৬-১৭ বছর বয়সে রিকশা চালানো শুরু করেন। এর কয়েকবছর পর বিয়ে করেন। বড় পরিবার হওয়ায় তাদের পরিবারের কেউ লেখাপড়া করতে পারেনি। বাবা কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। সঙ্গে সহযোগিতা করতেন তারা। বাবার মৃত্যুর পর সামান্য ৫ শতাংশ জমি পেয়েছেন তিনি, সেখানেই বাড়ি করেছেন। এছাড়া সম্পদ বলতে আর কিছুই নেই। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে মঈফল খানের। সবাই এখন নিজের পরিবার নিয়ে ব্যাস্ত। তাই স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য এই বয়সেও তিনি ভাড়ায় রিকশা চালাচ্ছেন।
রিকশাচালক মঈফল খান বলেন, রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে এবং আল্লাহ চালায়। ব্যাটারিচালিত রিকশা হওয়ায় কিছুটা সুবিধা পাই, কারণ এই বয়সে পায়ে চালানো রিকশা চালাতে পারতাম না। জমি-জমাও নেই যে তা চাষাবাদ করে চলব। সরকারের বৃদ্ধদের প্রতি নজর দেয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
অপরদিকে বানিবহ ইউনিয়নের বেথুলিয়া নতুনপাড়ার মৃত ফজের আলী শেখের ছেলে ইব্রাহিম শেখ (৬০) প্রায় ৪০ বছর ধরে রিকশা চালান। আগে পায়ে চালানো রিকশা চালাতেন, এখন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান। রিকসা চালিয়ে যা পান তা দিয়ে এবং সন্তানদের থেকে কিছু টাকা নিয়ে সংসার চালান। এভাবেই চলছে তার দিন।
এছাড়া মিজানপুর ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর এলাকার মৃত বলাই শেখের ছেলে কুটি শেখ (৫৫) ৪০ বছর ধরে রিকসা চালিয়ে জীবন ধারণ করছেন। নিজের সম্পত্তি বলতে কোনো কিছুই নেই। কোনো সহযোগিতাও পান না কারও থেকে। দিন শেষে রিকশা ভাড়া দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে কোনো রকমে চলেন। রিকশা না চালালে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারেন না।
সদর উপজেলার কাটাখালী এলাকার মৃত ফজের আলী শেখের ছেলে শুকুর আলী শেখ (৭৫) অন্য কোনো কাজ না পারায় এ পেশা বেছে নিয়েছেন এবং এ থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই কষ্টে দিন যাপন করছেন।
রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ উপজেলায় রিকশার প্রচলন থাকলেও বালিয়াকান্দি, কালুখালী ও পাংশায় রয়েছে ভ্যানের প্রচলন। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা হওয়ায় বৃদ্ধ চালকদের কিছুটা সুবিধা হচ্ছে। এ কারণে জেলায় বৃদ্ধ রিকশা চালকদের সংখ্যাটাও বেড়েছে।
রাজবাড়ী জেলা রিকশা ও ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৪ হাজারের অধিক লাইসেন্সকৃত রিকসা ও ভ্যান রয়েছে এবং লাইসেন্স ছাড়া আরও প্রায় ১৫ হাজারের মতো রিকশা ও ভ্যান রয়েছে। কোনো শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা গেলে বয়স অনুযায়ী তার পরিবারকে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে এককালীন ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়।
রুবেলুর রহমান/আরএআর/পিআর