ভাটায় পুড়ছে গ্রাম
নরসিংদীর বেলাবোতে লোকালয়ে ও ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে তোলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামবাসী। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রসাসনকে ম্যানেজ করে সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করেই ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন মালিকরা। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
আর পরিবেশ বিভাগ বলছে, পরিবেশ দূষণ রক্ষায় সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। তাই বিধি বিধান অমান্য করলে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
সরকারি বিধিবিধান ও পরিবেশ আইন অনুযায়ী ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনের কোনো বিধান নেই। একইসঙ্গে লোকালয় থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। সেইসঙ্গে গ্রামবাসী তথা সর্ব সাধারণের স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচানা করে ভাটা চালাতে হবে।
কিন্তু নরসিংদীর বেলাব উপজেলার গাংকুল পাড়ায় এর উল্টো চিত্র। গ্রামের গণবসতি এলাকায় ফেভারিট ব্রিকস্ লি: নামে একটি ইটভাটা দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। ইটভাটার ফলে গ্রামের শত শত ফল-ফলাদীর গাছ মারা গেছে। পুড়ে গেছে অবশিষ্ট গাছের পাতা। ফসলি জমিতে এখন আর ফলন আসে না। ভাটার কালো দোয়ায় নষ্ট হচ্ছে জমির ধান। কমে এসেছে উৎপাদন।
তাই ইটভাটা স্থানান্তরে একাট্টা হয়েছেন গ্রামের হাজার হাজার কৃষক। কিন্তু প্রতিবাদ করলেই গ্রামবাসীর উপর মামলা দেয়াসহ নানা নির্যাতন চালাচ্ছে ভাটামালিক। তাই ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা স্থানীয়রা। বিভিন্ন সময় থানা পুলিশ ও উপজেলা কর্মকর্তার নিকট অভিযোগ দিলেও কাজের কাজ হয়নি কিছুই।
রাশিদা আক্তার নামে এক বৃদ্ধা জানান, বাড়ির আঙিনা ও সড়কের সীমানা দিয়ে সারি সারি ৭০টি কাঁঠাল গাছ ছিল। ইটভাটার কালো ধোয়ায় সবগুলো গাছ মরে গেছে। শুধু তাই নয়, গাছগুলোতে পোকা ধরে একবারে লাকড়ি হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবাদ করলেই বাড়ি ঘরে হামলা করে। বউ-ঝি লইয়া কই যামু। হেই ডরে কিছু কইনা।’
একই গ্রামের কৃষক মনিরুজ্জামান বলেন, ইটভাটার কারণে আমাদের ফসলি জমি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন কোনো ফসল হয় না। শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ দিয়েছি। কোনো কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আমাদের ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছি।
গাংকুল পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোসলেউদ্দিন বলেন, ভাটা মালিক আমানুল্লাহ সুবিধাবাদী লোক। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে সে দলেই যোগদান করে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আগে বিএনপি করতো, এখন শুনেছি আওয়ামী লীগে যোগ দিছে।
ইটভাটা মালিক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ইটভাটার কারণে গ্রামবাসীর কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। বরং উপকার হচ্ছে। আমি গ্রামবাসীর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। তারা এখানে কাজ করছে। পরিবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি কোনো কথা বলেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে হাবীবা বলেন, বিষয়টি পরিবেশ অধিদফতরের এখতিয়ার। কারণ তারাই ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়। তারপরও অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পরিবেশ অধিদফতরের নরসিংদী জেলার রিসার্চ অফিসার আকতারুজ্জামান টুকু বলেন, পরিবেশ দূষণকারী ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালিত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। কেউ যদি নিয়ম বর্হিভূতভাবে চালিয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এফএ/পিআর