মঞ্চ প্রস্তুত, আত্মসমর্পণের প্রতীক্ষায় ইয়াবা কারবারিরা
দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে মঞ্চ। টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তৈরি করা মঞ্চে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে প্রতীকীভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে গডফাদারসহ শতাধিকের বেশি ইয়াবা ব্যবসায়ী। সেফহোমে থাকা ইয়াবা কারবারিদের সড়কপথে টেকনাফ আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টেকনাফে অবস্থান করছেন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন জানান, সেফহোমে আসা ১২০ ইয়াবা কারবারিকে বহনকরা বাসগুলো মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে সাড়ে ১০টায় টেকনাফ পৌঁছেছে। অতিথিরাও মঞ্চে এসেছেন। এরপর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে।
তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মাদক নির্মূলে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। ফলে তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিজ ইচ্ছায় আত্মসর্পণ করতে রাজি হয়েছেন।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, আত্মসমর্পণ করতে আসা ইয়াবা কারবারিদের বেশ কয়েকটি শর্ত দেয়া হচ্ছে। তা হলো, নিজের হেফাজতে থাকা সকল ইয়াবা ও অবৈধ অস্ত্র পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে।
আত্মসমর্পণের আগে দায়ের হওয়া মামলা ও বিচারকার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
ইয়াবা ব্যবসায় নিজের/পরিবারের সদস্য বা আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে অর্জিত সকল সম্পদ দুদক, সিআইডির মানি লন্ডারিং শাখা ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় দায়ের হওয়া মামলায় সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সহায়তা প্রদান করা হবে।
যে সকল মাদক ব্যবসায়ী এখনো সক্রিয় তাদের ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে হবে।
আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার পাশাপাশি নিজ নিজ এলাকায় মাদকবিরোধী কর্মকাণ্ড করতে হবে।
ভবিষ্যতে কখনো মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত অপরাধে জড়িত হওয়া যাবে না।
গত দুই মাস আগে নিজ ইচ্ছায় ‘সেফহোমে’ চলে যাওয়া শতাধিকের বেশি শীর্ষ ইয়াবা কারবারি এসব মেনে নিয়ে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে মাঠে আত্মসর্পণ মঞ্চে হাজির হচ্ছেন বলে দাবি করেছে সূত্রটি।
জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান।
এখন পর্যন্ত সীমান্তে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ৪২ কারবারি। এর মধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এটি দেখেই প্রাণ বাঁচাতে ইয়াবায় অভিযুক্তরা আত্মসমর্পণ করতে সেফহোমে যান।
জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ইয়াবা তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করা কারবারিরা ইয়াবা ব্যবসা ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অঙ্গীকার করবেন। অনুষ্ঠান শেষে আত্মসমর্পণকারীদের ফের কক্সবাজার জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।
সায়ীদ আলমগীর/বিএ/এমএস