শিশু ইমন হত্যায় জামায়াত নেতাসহ চারজনের ফাঁসি
সুনামগঞ্জের ছাতকের চাঞ্চল্যকর পাঁচ বছরের শিশু ইমনকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে জামায়াত নেতা স্থানীয় মসজিদের ইমামসহ চারজনকে ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. রেজাউল করিম এ রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট কিশোর কুমার কর রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, মামলার চার অসামির সবার ফাঁসির রায় দিয়েছেন অদালত। একইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১/৩৪ ধারায় লাশ গুম করার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক অসামিকে আরও ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের জেল দিয়েছেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন- ছাতক উপজেলার ছৈলা আফজলাবাদ ইউনিয়নের জামায়াতের সেক্রেটারি ও বাতিরকান্দি জামে মসজিদের ইমাম সুয়াইবুর রহমান সুজন, উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতের আমির ও বাতিরকান্দি গ্রামের জায়েদ আহমদ, একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও সালেহ আহমদ। তাদের মধ্যে সালেহ আহমদ ছাড়া অন্য তিনজন কারাগারে আটক রয়েছেন।
ছবি : মিঠু দাস জয়
আদালতে বাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এ কে এম শামিউল আলম ও অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন শহিদুজ্জামান চৌধুরী।
নিহত ইমনের বাবা বাতির গ্রামের বাসিন্দা জহুর আলী ছেলে হত্যার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে এবং দ্রুত কার্যকর করা হয়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামিপক্ষের আইনজীবী শহিদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রায়ে আমার মক্কেলরা ন্যায়বিচার পাননি। আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ অদালতে আপিল করব।
প্রসঙ্গত, ছাতক উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাতিরকান্দি গ্রামের সৌদি প্রবাসী জহুর আলীর ছেলে ও লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কারখানার কমিউনিটি বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্র মোস্তাফিজুর রহমান ইমনকে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করা হয়। মুক্তিপণের ২ লাখ টাকার মধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা পাওয়ার পরও অপহরণকারীরা শিশু ইমনকে হত্যা করে। ৫ এপ্রিল রাতে ইমনের বাড়ি সংলগ্ন মসজিদের আঙিনায় তাকে বিষপান করিয়ে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
ছবি : মিঠু দাস জয়
এর আগে ২৮ মার্চ ইমনের বাবা জহুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ছাতক থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় প্রথমে ৪ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৮ এপ্রিল মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সিলেটের কদমতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে শিশু ইমনের হত্যাকারী স্থানীয় মসজিদের ইমাম সুয়েবুর রহমান সুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, বিষের বোতল ও রক্তমাখা কাপড় উদ্ধার করে। এমনকি বাতিরকান্দি হাওর থেকে ইমনের মাথার খুলি ও হাতের হাড় উদ্ধার করে এবং জড়িত সন্দেহে মোট ৬ জনেক গ্রেফতার করে।
মামলা দায়েরের পর ২০১৬ সালের ২১ নভেম্বর ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। এরা হচ্ছে সুজন, রফিক, জাহেদ, সালেহ, বাচ্চু, কাহার ও নুরুল আমিন। চার্জ গঠনের সময় অভিযুক্তদের মধ্যে বাচ্চু, কাহার ও নুরুল আমিনকে বাদ দেন আদালত।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। এর ফলে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকেই বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়। গত ২৪ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করেন আদালত। এতে বর্তমানে হবিগঞ্জের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ২য় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ শহীদুল আমিন ও সুনামগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শ্যাম কান্ত সিনহা, ডাক্তার, তদন্তকারী কর্মকর্তা ও নিহতের মা বাবাসহ ২৩ জন সাক্ষ্য দেন। ২৮ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষে আজ বুধবার রায় ঘোষণা করেন আদালত।
ছামির মাহমুদ/আরএস/এফএ/জেআইএম