নিউরোফাইব্রোমেটোসিসে আক্রান্ত পরিবারটি
খুলনার দাকোপ উপজেলার পানখালি ইউনিয়নের খাটাইল গ্রামের শিবপদ মন্ডল (৩৯)। জন্মের তিন বছর পর তার শরীরে টিউমারের চিহ্ন দেখা দেয়। বর্তমানে শিব পদ মন্ডলসহ তার ২ সন্তানও নিউরোফাইব্রোমেটোসিস নামক রোগে অর্থ সংকটে চিকিৎসার অভাবে দিনাতিপাত করছে।
শিব মন্ডলের পরিবারে অভাব থাকায় লেখাপড়া না করে সংসার জীবনে চলে যান তিনি। বিয়ের পরে স্ত্রী রিতা মন্ডল একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। তার নাম সেজ্যোতি মন্ডল। জন্মের চার থেকে পাঁচ মাস বয়সে সেজ্যোতির কোমরে বাবার মতো একই অবস্থা দেখা দেয়। সে এখন পঞ্চম শ্রেণিতে লেখাপড়া করে। এরপর ওই দম্পত্তি আরও একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম সেতু মন্ডল (৮)। সেতু জন্মের দুইমাস পর সেও একই রোগে আক্রান্ত হয়। নিউরোফাইট্রোমেটাসিস নামক রোগটি এখন তাদের সর্বাঙ্গ জুড়ে ফেলেছে।
পাঁচ সদস্যের অতিদরিদ্র পরিবারের বাবা ও দুই সন্তান একই রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন মৃত্যু পথযাত্রী। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় প্রতিবন্ধী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে তারা। জীবন বাঁচাতে তারা সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করেছেন।
শিবপদ মন্ডল জানান, তিন বছর বয়সে পিঠে টিউমারের মতো দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সেটি বড় হওয়ায় স্থানীয় চিকিৎসকের সেবায় সুফল না পেয়ে ভারতের কলকাতার আর্জিকল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। দীর্ঘ পাঁচ বছর সেখানে চিকিৎসা নিয়ে সর্বশেষ কলকাতার পি ব্যানার্জির হোমিও চিকিৎসা নিয়ে ভালো না হওয়ায় হতাশ হয়ে দেশে আসি। এর মধ্যে স্ত্রী দুই সন্তানকে এমন অবস্থা দেখে পরিবার ছেড়ে তার বাবার বাড়িতে চলে যায়।
তিনি আরও জানান, বর্তমানে সারা শরীরের টিউমারগুলো মাঝে মধ্যে নদীর ঢেউয়ের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। শরীরের সমস্ত শিরাকষে আসে। সঠিকভাবে চলাফেরাও করতে পারছি না। লাঠিতে ভর দিয়ে অনেক কষ্টে চলতে হয়।
শিবপদ মন্ডলের বৃদ্ধ বাবা ঠাকুর দাস মন্ডল বলেন, সহায় সম্পত্তি বলতে ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কিছুই নেই। যেটুকু ছিল তার সঙ্গে ধারদেনা হয়ে এ পর্যন্ত তাদের চিকিৎসা চালিয়ে আসছি। এখন আমার বয়স হওয়ায় ভ্যানগাড়ি চালিয়ে ঠিকমতো রোজগার না করতে পেরে পরিবারের ব্যয়বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া তাদের চিকিৎসার জন্য আমার কাছে আর কিছু নেই। এখন তারা অর্থের অভাবে বিনাচিকিৎসায় ঘরে পড়ে আছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক জানান, শিবপদ নিউরোফাইব্রোমেটোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে খুলনা শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে রেফার্ড করা হয়েছে। এ রোগের চিকিৎসা দীর্ঘ মেয়াদি হওয়ায় অনেক টাকার প্রয়োজন হয়ে পড়বে।
পরিবারটির সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৯৬২ ৮৬৫১৭০ নম্বরে।
আলমগীর হান্নান/এমএএস/এমএস