ভুয়া সনদেই লাখ টাকা বেতন নেন ‘চিকিৎসক’
অন্যের নাম এবং বিএমডিসির নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে ডাক্তার সেজে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে মাসুদ করিম নামে এক ‘চিকিৎসকের’ বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এমন প্রতরণা করে এলেও বিষয়টি গত মঙ্গলবার প্রকাশ পায়। আর এরপরই গা ঢাকা দেন কথিত ওই চিকিৎসক।
ঘটনাটি ঘটেছে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায়। অভিযুক্ত মাসুদ ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের শরৎনগর বাজারের হেলথ কেয়ার লিমিটেড নামে একটি ক্লিনিকের আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
এদিকে ঢাকার একটি ক্লিনিকে কর্মরত আসল মাসুদ করিম বৃহস্পতিবার পাবনার সিভিল সার্জন ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দিয়েছেন।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিম ৮ বছর আগে ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিক লিমিটেডে আলট্রাসনোলজিস্ট ও আবাসিক চিকিৎসক হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তার বেতন ধার্য হয় ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ওই ক্লিনিকে মাসুদ করিম বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ৩৩৩৬০ ব্যবহার করে ক্লিনিকে রোগী দেখার পাশাপাশি আলট্রাসনোগ্রাম করতেন।
সম্প্রতি সাঈদ মাহবুব উল কাদির নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুক আইডিতে মাসুদ করিমের প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস আপলোড করেন। সেখানে তিনি ভুয়া ও প্রকৃত চিকিৎসকের ছবি দিয়ে লেখেন, ‘হেলথ কেয়ার লিমিটেড ক্লিনিকে বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ৩৩৩৬০ ব্যবহার করে যিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন তিনি প্রকৃত ডাক্তার নয়। ঢাকার একটি ক্লিনিকে কর্মরত চিকিৎসক প্রকৃত মাসুদ করিমের নাম-পরিচয় ও নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় চিকিৎসা দিচ্ছেন ভুয়া ডাক্তার মাসুদ করিম।’
এরপর ফেসবুকে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে পড়ে। পরে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন অভিযুক্ত মাসুদ করিমের কাছে তার শিক্ষাজীবন ও বিএমডিসির সকল কাগজপত্র চাইলে ওই রাতেই তিনি ভাঙ্গুড়া ত্যাগ করেন।
এদিকে প্রকৃত ডাক্তার মাসুদ করিম বলেন, ‘ঢাকার খিলগাঁওয়ে আমার নিজস্ব চেম্বারে আমি দীর্ঘদিন প্র্যাকটিস করি। অতি সম্প্রতি জেনেছি আমার নাম-পরিচয় ও বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বর ব্যবহার করে পাবনার ভাঙ্গুড়ায় একই নামে একজন ভুয়া চিকিৎসক ক্লিনিকে চাকরি করছেন। বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিভিন্ন শাখায় মৌখিকভাবে জানিয়েছি এবং পাবনার সিভিল সার্জনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তার বিরুদ্ধে আমি দু’টি মামলা করবো।’
আসল মাসুদ করিম ও তার সনদ
তবে অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চায়লে কথিত চিকিৎসক মাসুদ করিমের মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ১৯৯২-৯৩ সেশনে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি আজ (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় এসেছি। বিএমডিসিতে গিয়েছিলাম। তারা আমাকে নতুন করে কাগজপত্র ঠিক করে নিয়ে আসতে বলেছে। আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি।’
তিনি জানান, তার পৈত্রিক বাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলায়। তবে রংপুরের শালবন এলাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। তার বাবার নাম আবদুস সাকুর।
অভিযুক্ত মাসুদ করিমের বিষয়ে হেলথ কেয়ার লিমিটেড ক্লিনিকের পরিচালক আবদুল জব্বার জানান, মাসুদ করিম মাসিক এক লাখ ১৫ হাজার টাকা বেতনে ওই ক্লিনিকে চাকরি করেন। তিনি পাবনা জেলা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) আজীবন সদস্য। পাবনার বিভিন্ন ক্লিনিকে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। আমাদের কাছে তার সনদের ফটোকপি জমা দিয়েছিলেন। তবে এখন শুনছি সেগুলো ভুয়া।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুন জানান, ভাঙ্গুড়া হেলথ কেয়ার ক্লিনিকের চিকিৎসক দাবিদার মাসুদ করিম মূল কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। প্রকৃত মাসুদ করিম স্বশরীরে আমার কাছে এসে অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি সিভিল সার্জন স্যার, ইউএনও ও বিএমডিসি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে পাবনার সিভিল সার্জন ডাক্তার তাহাজ্জেল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খাতুনকে বলেছি।
একে জামান/এফএ/এমএস