টাকার প্রয়োজন নেই, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২ মিনিট কথা বলতে চাই
বিরল রোগে আক্রান্ত ২৭ বছর বয়সী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম চিকিৎসা করতে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে ৫ বার ভিসার জন্য আবেদন করেও পাননি। সব কাগজপত্র সঠিক থাকার পরও কেন তিনি ভিসা পাচ্ছেন না এর কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না জহিরুল।
তার রোগের বিশ্বের একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব রোসেস্টার মেডিকেল সেন্টারের নিউরো মাসকুলার ডিজিজেস সেন্টারের 'দ্য সেন্টার অব ফিল্ড ফ্যাসিও স্ক্যাপন্টো হিউম্যারাল মাসকুলার ডিসট্রোফি' বিভাগ। সেখানে চিকিৎসা নেয়ার জন্য দুই বছর ধরে তিনি ছুটছেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে, কিন্তু প্রতিবার তার ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
জহিরুলের চিকিৎসার জন্য ভারতের কয়েকজন চিকিৎসক ও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ডা. রাবি তাওয়ালও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে চিঠি পাঠান। তাতেও কোনো কাজ হয়নি জহিরুলের। এমনকি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগের সহযোগিতায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও জহিরুলকে ভিসা দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে দূতাবাসে চিঠি দেন। তারপরও ভিসা পাননি জহিরুল।
এখন হতাশ হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে জহিরুল বিভিন্ন গণমাধ্যম অফিসে ছুটছেন তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরতে। তার বিশ্বাস এ সমস্যা একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই সমাধান করতে পারবেন। তিনি মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলার সুযোগ পেলেই তার দুই বছরের যন্ত্রণা তিনি ভুলে যাবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। সেখানে তার চিকিৎসা হবে। তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন।
এমন প্রত্যাশা নিয়ে বুধবার বিকেলে পথচারীদের সহযোগিতায় জাগো নিউজের কার্যালয়ে হাজির হন জহিরুল ইসলাম। দুজন পথচারী তাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার করে জাগো নিউজের অফিসে পৌঁছে দেন।
জহিরুল 'ফ্যাসিও স্ক্যাপন্টো হিউম্যারাল মাসকুলার ডিসট্রোফি' নামে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। এ রোগে প্রথমে রোগীর শরীর শুকাতে শুরু করে। পরে হাত-পা বেঁকে যায়। গিরায় গিরায় ব্যথা হয়। এরপর প্যারালাইসিস আক্রান্ত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে মৃত্যু হয় এসব রোগীর। বর্তমানে জহিরুলের শরীরও শুকাতে শুকাতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে এখন হাড় ছাড়া আর কিছু নেই।
জহিরুল বলেন, কোনো জায়গায় বসলে উঠতে পারি না। রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারি না। প্রতিটি কাজ করতে হয় অন্যের সহযোগিতা নিয়ে। মা-বাবা কেউ নেই। এক বোন ছিল বিয়ে হয়ে গেছে। শুনছি সেও আমার মত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার মুগদায় খালার বাসায় থেকে জীবন কাটছে আমার। অনেক জায়গায় চিকিৎসা করিয়েছি কোনো লাভ হয়নি। বাংলাদেশে তো রোগই শনাক্ত করতে পারেনি। ভারতের ব্যাঙ্গালুরে গিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তার রোগের নাম।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার একটি কলেজে পড়ার সময় ছাত্রলীগের ভিপি ছিলাম। সেই সুবাধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। সবার সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ টাকা পেয়েছি। অথচ ভিসা না পাওয়ার কারণে চিকিৎসা নিতে যেতে পারছি না।
জহিরুল বলেন, ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সেখানকার ডাক্তার বলেছেন এভাবে চলতে থাকলে আমার বয়স যখন ৩১ বছর হবে তখন পুরো শরীর প্যারালাইসিস হয়ে যাবে। এর কিছুদিন পর আমার মৃত্যু হবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ডা. রাবি তাওয়ালের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ হয়েছে। তিনি বলেছেন, সেখানে এ রোগের চিকিৎসা হয়। তিনি জানিয়েছেন, এ রোগের বিশ্বের ১৪৭তম রোগী আমি। এর আগে যারা সেখানে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা আজ প্রায় সুস্থ। অথচ আমি ভিসা না পাওয়ার কারণে যেতে পারছি না। আমার টাকার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন ভিসার। প্রধানমন্ত্রী যদি দূতাবাসে বলে দেন তাহলেই আমি ভিসা পাব। হয়তো চিকিৎসা নিয়ে বেঁচেও যাব। তিনিই পারবেন আমাকে বাঁচাতে।
জহিরুলের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ২নং পাথুর ইউনিয়নের বেরকোটা গ্রামে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউপি সদস্য সেলিম তার অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ বিষয়ে জাগো নিউজ থেকে যোগাযোগ করা হয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে। তিনি জানান, জহিরুলের বিষয়টি আমরা অবগত। এরপর জহিরুল ভিসার জন্য আবেদন করলে আমরা আবারও দূতাবাসকে চিঠি দেব, তাকে যেন ভিসা দেয়া হয়।
জহিরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৮১১-৯০৩৪৩৬ নম্বরে।
এমএএস/আরআইপি