কৃষকের কষ্টের ফল ব্যবসায়ীদের পকেটে
বোরো রোপণে নেমে পড়েছেন রাজশাহীর কৃষকরা। গোলাভর্তি আমন ধান কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। সরকারি উদ্যোগে ধান সংগ্রহ না করায় কৃষদের দুর্দিন যাচ্ছে না।
এছাড়া দেরিতে চাল সংগ্রহ শুরু হওয়ায় মেলেনি ধানের নায্য মূল্য। উল্টো পকেট ভারি হয়েছে এখানকার ধান-চাল ব্যবসায়ী ও মিলারদের।
রাজশাহী কৃষি দফতরের হিসাবে, এ বছর জেলায় ৭৫ হাজার ১৬৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে আবাদ বেড়েছে ৭ শতাংশ। এ থেকে এক লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলন হয়েছে বাম্পার। কিন্তু বাজারে ধানের দাম না থাকায় হাসি নেই কৃষকের মুখে। এখন জেলার বিভিন্ন বাজারে প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায়।
কৃষকরা বলছেন, বোরো আবাদে নামতে গোলার ধান বিক্রি করতে হয়েছে সস্তায়। এ সুযোগে মজুতদার ও মিলাররা মজুত গড়েছেন। ওই মিলাররাই এখন সরকারকে চাল সরবরাহ করছেন। ফলে কৃষকদের কষ্টের লাভ চলে যাচ্ছে মজুতদার ও মিলরাদের পকেটে।
এদিকে, ১৩ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহীতে সরকারিভাবে চাল সংগ্রহ শুরু হয়েছে। কিন্তু তারও সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল দেবেন ২৩৮ জন মিলার। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৭ হাজার ৩৩৩ টন চাল সংগ্রহ হবে। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ৬ হাজার ৪৮০ টন।
রাজশাহীর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভুঁইয়া বলেন, ধানের উৎপাদন খরচ হিসাব করে ধানের দাম ধরা হয়। সেক্ষেত্রে কৃষকদের অভিযোগ সত্য নয়। তারপরও যদি কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মিলারদের দৌরাত্ম্য থাকতে পারে।
রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় চলতি আমন মৌসুমে সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৭৭ টন। ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৪২০ টন।
এর আগে গত বছরের বোরো মৌসুমে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৭ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চাল সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯০৬ টন। ৩৮ টাকা কেজি দরে চুক্তিবদ্ধ ৫ হাজার ৮৪১ মিলার চাল সরবরাহ করেছেন।
এছাড়া গত আমন মৌসুমে ৫ হাজার ৭৭৫টি চুক্তিবদ্ধ চালকল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০৬ টন আমন চাল সংগ্রহ করা হয়। কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে ওই সময় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা হয়েছিল। তবে আমন মৌসুমে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭২৬ টন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন, বাজারে চালের দাম সহনীয়। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে কয়েকদিন বন্ধ ছিল চালকলগুলো। বন্ধ ছিলো সরবরাহ। এর প্রভারে সামান্য বেড়েছিল চালের দাম। এখন চালের বাজার স্থিতিশীল।
তিনি আরও বলেন, সরাসরি ধান সংগ্রহের কিছু সমস্যা আছে। তারপরও কৃষকদের কথা মাথায় রেখে সামনে ধান সংগ্রহকের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এখনও এই সংক্রান্ত নির্দেশনা আসেনি।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/পিআর