সেই আমবাগান এখন ইকোপার্ক
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা-তালা বাইপাস সড়কের গোপালপুর এলাকায় বাবুর আমবাগান হিসেবে খ্যাতি পাওয়া দখল হয়ে যাওয়া জায়গাটি এখন বদলে গেছে। সেই আমবাগানটি এখন ইকোপার্ক। যা তালা উপজেলার মানুষের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র।
জাগো নিউজের এক অনুসন্ধানী সংবাদে বদলে যায় জমিদার বাড়িটি ও দখল হয়ে যাওয়া আমবাগানের দৃশ্যপট।
২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল ‘হারিয়ে গেছে ঐতিহ্য, দখল হয়েছে জমি’ শিরোনামে জাগো নিউজে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর তৎকালীন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দীনের সহযোগিতায় তৎকালীন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বর্তমান মাগুরা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ফরিদ হোসেন শুরু করেন অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান কার্যক্রম।
একই সঙ্গে দখল হওয়া বাবুর আমবাগানটিকে ঘিরে শুরু করেন বিনোদন কেন্দ্র স্থাপন তৈরির কার্যক্রম। অবশেষে প্রশাসনের উদ্যোগে খোলা-জানালা ইকোপার্ক হিসেবে রূপান্তর হয় দখল হয়ে যাওয়া আমবাগানটি। আর জমিদার বাড়িটি ব্যবহার হচ্ছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, গোপালপুর এলাকায় তৎকালীন জমিদার ছিলেন অবলা কান্ত ঘোষ। অবলা কান্ত ঘোষ, বলয় ঘোষ, রবি ঘোষ ও উৎপল ঘোষের বাবা সুরেন ঘোষ ছিলেন সেসময়কার খুলনা জেলার চেয়ারম্যান। তৎকালীন প্রভাবশালী পরিবারটি দেড়শ বছর আগের কোনো এক সময়ে তালার গোপালপুর এলাকায় গড়ে তোলেন জমিদারি। এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য থাকা সুরেন ঘোষ প্রায় ৯০ বিঘা জমির ওপর নির্মাণ করেন বসতভিটা। প্রায় একযুগ পর জমিদার সুরেন ঘোষের মৃত্যুর পর বড় ছেলে অবলা কান্ত ঘোষ জমিদার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আরও জানা যায়, সব মিলিয়ে এলাকায় তাদের সাতশ বিঘা জমি ছিল। যা এখন দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন মানুষ। কেউ কেউ জাল দলিল তৈরি করে নিজের জমি বলে দাবি করেন। দুটি পরিবার সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে সেখানে স্থায়ী বসবাসও শুরু করেছেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সময় হঠাৎ পরিবার পরিজন নিয়ে জমিদার অবলা কান্ত দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ি জমান। তারপর থেকে তাদের কেউ আর এখানে ফিরে আসেননি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে সব দখলে নিতে শুরু করে স্থানীয় মানুষ। তবে এ জমিদারের দেশ ছাড়ার কারণ কেউ সঠিক জানাতে পারেননি।
স্থানীয় সমাজকর্মী মো. আলাউদ্দীন গাজী জাগো নিউজকে বলেন, জমির সঙ্গে সঙ্গে বাবুর রেখে যাওয়া আমবাগানটি সব দখল করে নিয়েছিল বিভিন্ন মানুষ। দেড় বছর আগে এখানে ইকোপার্ক তৈরি কার্যক্রম শুরু হয়। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষরা এখানে নিরিবিলি সময় কাটানোর জন্য আসেন। তালাবাসীর বিনোদন কেন্দ্র হয়েছে এই খোলা জানালা ইকোপার্ক।
২৮ বিঘা জমির ওপর ইকোপার্কটির বিভিন্ন স্থানে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া চলাফেরার জন্য ইটের সোলিং করা হয়েছে। ছাউনি করে গোল চত্বর করা হচ্ছে।
ইকোপার্কটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা তালার ইসলামকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুভাষ সেন জাগো নিউজকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি টিম ইকো পার্কটি পরিদর্শন করেছেন। এটাকে বলা হচ্ছে ডিজিটাল জরিপ। এটাকে পূর্ণাঙ্গ পার্ক হিসেবে রূপদানের জন্য কাজ করছে সরকার।
তৎকালীন তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদ হোসেন বলেন, জমিদার অবলা কান্ত ঘোষের ২৮ বিঘা মত জমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। পুরো জমিটা খোলা জানালা ইকোপার্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি উদ্যোগে ধীরে ধীরে এটি পূর্ণাঙ্গ পার্ক হবে।
আকরামুল ইসলাম/এএম/এমকেএইচ