১৫ সড়ক নিয়ে শত বছরের পরিকল্পনা রাসিকের
ক্রমেই ঘন হচ্ছে রাজশাহী নগরীর জনবসতি। একে একে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। বাড়ছে নগরমুখী মানুষের স্রোত। এসব বিষয় মাথায় রেখে নগরীর সড়ক ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। শত বছরের পরিকল্পনায় এই ধাপে রয়েছে নগরীর ১৫টি সড়ক।
নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিকল্পনায় থাকা সড়কগুলো রয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। সরু এসব সড়কে দিনে দিনে চাপ বাড়ছে। প্রত্যেকটি সড়ক ৪২ মিটার চওড়া করবে রাসিক। এর মধ্যে ৩০ মিটারই থাকবে মূল সড়ক। আর সড়কের দুই পাশে ফুটপাত থাকবে ৬ মিটার করে। সবগুলো সড়ক মিলিয়ে হবে ৪২ দশমিক ২৫ মিটার দীর্ঘ।
নগরীর ক্রমবর্ধিষ্ণু যাতায়াত ও যানবাহন পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আগের মেয়াদে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। কিন্তু মাঝে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় থমকে যায় অগ্রগতি। খায়রুজ্জামান লিটন এবার মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে প্রকল্পটি।
রাসিকের প্রধান প্রকৌশলীর দফতর জানিয়েছে, ওই ১৫ সড়ক নিয়ে ‘রাজশাহী মহানগরীর সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প হাতে নিয়েছে নগর কর্তৃপক্ষ। তাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে সড়ক নির্মাণে। বাকি আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ভূমি অধিগ্রহণে।
তালিকায় থাকা সড়কগুলো হলো- সুজানগর খ্রিষ্টানপাড়া মোড়-উত্তর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল রাজশাহী বাইপাস সড়ক; বুলনপুর পুলিশ লাইন গেট-শহররক্ষা বাঁধ, বুলনপুর পিটিআই স্কুলরক্ষা বাঁধ এবং আরবান প্রাইমারি হেলথ সেন্টার-কোর্ট শহীদ মিনার সড়ক।
ঘোষপাড়া মোড়-সদর হাসপাতাল মোড়-দরগাপাড়া মোড়-হোসনীগঞ্জ পানির পাম্প হাউস, সদর হাসপাতাল মোড়-বর্ণালী মোড়-মহিলা কলেজ এবং সদর হাসপাতাল মোড়-মালোপাড়া বাচ্চু স্মৃতি ক্লাব সড়ক; সপুরা রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক-শিরোইল কলোনী বিশ্ব গোডাউন-রেলওয়ে মাঠ-নতুন বাস টার্মিনাল এবং নওগাঁ রোড-উপশহর সেন্ট্রাল হাসপাতাল সড়ক; সাগরপাড়া কল্পনা রোড-বোয়ালিয়া মডেল থানা এবং বোয়ালিয়া মডেল থানা-ঘোড়ামারা পোস্ট অফিস-রেশমপট্টি প্রধান সড়ক।
ভদ্রা স্মৃতি অম্লান-সাধুর মোড়-নাটোর রোড, খরবোনা স্কুল-শহীদ মিনার এবং সিটি হাসপাতাল-হাদির মোড়-সাধুর মোড় সড়ক; তালাইমারি-এশিয়ান বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক; কুমারপাড়া-সাহেব বাজার বড় মসজিদ-বড়কুঠি-হযরত শাহমুখদুম (রা) দরগা এবং বড়কুঠি-আরডিএ মার্কেট-ন্যাশনাল ব্যাংক সড়ক; রাবি রেলওয়ে স্টেশন-জিয়া স্কুল-মামুনের মোড়-চৌদ্দপায়া ফায়ার সার্ভিস সড়ক।
ভদ্রা রেল ক্রসিং-খড়খড়ি, জামালপুর মোড়-হজের মোড়-চকপাড়া বটতলা, ছোট বনগ্রাম বড় মসজিদ-নতুন বাস টার্মিনাল সড়ক-চকপাড়া বটতলা, মেহেরচন্ডি স্কুল-জলিলের মোড়- রাবি রেলওয়ে স্টেশন এবং ছোট বনগ্রাম কালভাট-নতুন বাইপাস সড়ক; কাজলা গেট-কেডি ক্লাব-ধরমপুর জাহাজ ঘাট এবং অক্ট্রয় মোড়-কেডি ক্লাব-জাহাজ ঘাট সড়ক।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার গেইট-সুফিয়ানের মোড়, কাদের মন্ডলের মোড়-আপেল ডেকোরেটর মোড়-সিটি বাইপাশ সড়ক; বিনোদপুর বাজার-শামসুদ্দিনের বাড়ী-খোজাপুর গোরস্থান-ডাঁশমারী স্কুল এবং মালেকের মোড়-করিডোর-রফিকুল স্বর্ণকারের বাড়ি-মিজানের মোড় সড়ক।
রামচন্দ্রপুর রাজশাহী-নাটোর সড়ক থেকে বাশার রোড-টিকাপাড়া গোরস্থান এবং টিকাপাড়া গোরস্থান-শান্তিবাগ, শিরোইল মঠপুকুর-জাহাঙ্গীর সরণি-শুভ পেট্রল পাম্প সড়ক; লক্ষ্মীপুর-ঝাউতলা-কোর্ট স্টেশন এবং কোর্ট স্টেশন-চারখুটার মোড়-সিটি বাইপাস এবং ঝাউতলা-মিশন হাসপাতাল সড়ক।
রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, রাজশাহী শহরে সড়ক রয়েছে সবমিলিয়ে ৩৫০ কিলোমিটার-যা ৯ শতাংশেরও কম। অথচ পরিকল্পিত নগরীতে ২৫ শতাংশ সড়ক থাকতে হয়। বিষয়টি মাথায় রেখেই সড়ক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মামলা জটিলতায় না পড়লে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে রাসিক।
তিনি আরও বলেন, এখন নগর কর্তৃপক্ষ প্রায় ১০ লাখ নাগরিকের সুবিধা দিচ্ছে। যে হারে দেশে জনসংখ্যার বাড়ছে তাতে একশ বছরে শহরের লোক সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৪০ লাখে। বিষয়টি মাথায় রেখে এসব প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। বাস্তবায়িত হচ্ছে আরও বেশ কিছু প্রকল্প। অচিরেই এর সুফল ভোগ করবে নগরবাসী।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/পিআর