৭১ বছর পর নতুন ঠিকানায় কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার
দীর্ঘ ৭১ বছর পর কিশোরগঞ্জ কারাগার স্থানান্তরিত হলো নতুন ঠিকানায়। ভোর থেকে পুরাতন কারাগারের বন্দিরের স্থানান্তর করা হয় উপজেলা সদরের বিন্নগাও মোড়ে নির্মিত অত্যাধুনিক নতুন করাগারে। এ উপলক্ষে নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, নতুন কারাগার চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এত করে মানবেতর জীবন-যাপন থেকে রেহাই পাবে বন্দিরা।
জানা গেছে, ১৯৪৮ সালে নির্মিত হয় মাত্র ২৪৫ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতার কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ধারণ ক্ষমতার ৬ গুন বন্দিকে রাখতে হতো পুরনো এ কারাগারে। তবে দেরিতে হলেও এ অবস্থার অবসান হয়েছে। অবশেষে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ নতুন জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হলো এ কারাগারের বন্দিদের।
১৯৯৮-৯৯ অর্থ বছরে ৬৮.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ শুরু করে গণপূর্ত বিভাগ। প্রায় ১৮ বছর পর শেষ হয় নির্মাণ কাজ। শনিবার ভোর ৬টা থেকে ৮টি প্রিজন ভ্যানে করে পুরাতন কারাগারের ১ হাজার ৩৮৩ জন বন্দি স্থানান্তর শুরু হয়।
জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশীদ জানান, মাত্র ২৪৫ জনের ধারণ ক্ষমতার পুরাতন জেলা কারাগারে রাখতে হতো ১২শ থেকে ১৪শ বন্দিকে। এতে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করতো। এ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছে। এখন বন্দিরা খোলামেলা পরিবেশে থাকতে পারবে। এখানে সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
পুলিশ সুপার মাশরুকর রহমান খালেদ জানান, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বন্দি স্থান্তান্তর কাজ শুরু হয়। নতুন ও পুরাতন জেলখানায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাস্তার মোড়ে মোড়ে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি। দুপুর নাগাদ শেষ হয় বন্দিদের নতুন কারাগারে পাঠানোর কাজ। বন্দি স্থানান্তর উপলক্ষে পুরো শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, নতুন কিশোরগঞ্জ কারাগারে খোলামেলা পরিবেশে প্রায় দুই হাজার বন্দি রাখা যাবে। এখানে বন্দিদের জন্য কমসংস্থান, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থাসহ সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।
২৮ একর জমির ওপর নির্মিত নতুন জেলা কারাগারে রয়েছে, নারী ও পুরুষ কয়েদিদের জন্য পৃথক চারটি ব্যারাক, প্রিজনার্স ওয়ার্কসেট, দুটি হাসপাতাল, প্রিজনার সেল ও কনডেম সেল, ক্লাসিফাইড প্রিজনার্স ব্যারাক, জেল অফিস, জেলারের বাস ভবন, স্টাফ কোয়ার্টারসহ আধুনিক ২৪টি ভবন।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন কারাগারটি জেলা কারাগার-১ নামে পরিচিত হবে। তবে পুরাতন কারাগারটিও জেল কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সেখানে বন্দিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
নূর মোহাম্মদ/আরএআর/এমকেএইচ